এ যেন অন্য এক স্কুল। যে দিকে তাকানো যায় কিছু না কিছু শেখার জিনিস ছড়িয়ে রয়েছে। ক্লাসরুমের দেওয়ালেই যেন আঁকা সিলেবাস। প্রাক প্রাথমিক থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের বহু বিষয় জায়গা পেয়েছে এই স্কুলের দেওয়াল, সিঁড়িতে। খুদে পড়ুয়ারাও দিনভর মজে থাকে স্কুলের মজায়।কোনও শহর নয়, পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ১ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামের কাঁটাড়ি পূর্বপাড়া অবৈতনিক প্রাইমারি স্কুলে খুদে পড়ুয়াদের জন্য গ্রাফিতি করা হয়েছে। চারদিকের দেওয়ালে তাকালেই খেলার ছলে পড়ার আনন্দ।
স্কুলে কম্পিউটার শেখানো থেকে বাগান তৈরি, সবই শেখানো হয় পড়ুয়াদের। এমনকী স্কুলের ছাদে জল ধরে চাষ করা হয় মাগুরমাছও। স্কুলের বাগানে সব্জিচাষও হয়৷ সেই মাছ ও সব্জি খাওয়ানো হয় মিড-ডে মিলে৷ শিক্ষকদের এমন উদ্যোগে খুশি অভিভাবকরাও।
দোতলা স্কুলে ঘরের সংখ্যা ৭। তার প্রতিটি দেওয়ালেই প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন বিষয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ পড়ুয়ারা সেই লেখা-ছবি দেখেই পড়তে পারবে বাংলা, অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান৷ স্কুলের বাইরের দেওয়ালে আঁকা রয়েছে ট্রেনের ছবি। তার কামরাগুলোয় লেখা ৬টি ঋতুর নাম। সংগ্রহের পাঠও শেখানো হয় স্কুলে।
স্কুলের সংগ্রহশালায় রাখা আছে পড়ুয়াদের হাতে তৈরি সমস্ত জিনিস। অন্য প্রাথমিক স্কুলে যখন পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে, তখন এই স্কুলে তা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। বর্তমানে ২১২ জন পড়ুয়াকে পড়ানোর জন্য রয়েছেন পাঁচ জন শিক্ষক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ কামারুজ্জামান বলেন, ‘পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ। এখন পড়ুয়ারা স্কুলে এসে আর বাড়ি ফিরতে চায় না। এই স্কুলে যে আসবে সে কিছু না কিছু শিখবেই।’
পড়ুয়াদের পড়ায় উৎসাহিত করতে কাঁটাড়ি গ্রামের ওই স্কুলের একাধিক পুরস্কারও জুটেছে৷ ২০১২ সালে কেতুগ্রাম পশ্চিম চক্র থেকে নির্মল বিদ্যালয়ের পুরস্কার পায় স্কুল। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রথম হয়ে রাজ্যে শিশুমিত্র স্কুলের স্বীকৃতি পায় কাঁটাড়ি পূর্বপাড়া অবৈতনিক। ২০১৬ সালে জেলায় প্রথম স্থান হিসেবে উৎকর্ষ পুরস্কার পায়৷ ২০১৭ সালেও কেতুগ্রাম পশ্চিম চক্রে প্রথম স্থান অধিকার করে।
ওই বছরে প্রধান শিক্ষক শিক্ষারত্ন পুরস্কার নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। অভিভাবক আজিজুল শেখ বলেন, ‘শিক্ষকদের চেষ্টায় এই স্কুল একেবারে আলাদা হয়ে উঠেছে। এখানে পড়াশোনার মান এত উন্নত যে আমরা বাচ্চাদের অন্য কোথাও পাঠানোর কথা ভাবি না। সব স্কুল যদি এমন ভাবে ভাবত তা হলে অভিভাবকরা সন্তানদের পড়া নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারত।’