তিনি চলে গিয়েছেন। কিন্তু, জাগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন নারী সমাজকে। নারী সুরক্ষার দাবিতে হাতে হাত ধরে আজ প্রতিবাদে নামছেন গোটা বাংলার মানুষ। শিক্ষক দিবসের দিনেও সেই ডাক্তারি পড়ুয়াকে স্মরণ করছেন সকলে। আরজি করের সেই ডাক্তারি পড়ুয়ার স্কুল জীবন কেমন ছিল? কী জানাচ্ছেন তাঁর স্কুলের শিক্ষিকারা?সোদপুর চন্দ্রচূড় বিদ্যাপীঠ গার্লস হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় সমস্ত শিক্ষিকাদেরই নজর ছিল তাঁর প্রতি। আজ শিক্ষক দিবসেও যেন সেদিনের কথা ভুলতে পারছেন না, আরজি কর কাণ্ডে মৃত চিকিৎসক তরুণীর স্কুলের শিক্ষিকারা। প্রাক্তন ছাত্রীর হাতের লেখা থেকে শুরু করে তাঁর নম্র স্বভাব, মিষ্টি হাসি ও শিক্ষিকাদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার কথা আজও যেন ঘুরে ফিরে মনে পড়ছে স্কুলের শিক্ষিকাদের।
প্রতিবছর শিক্ষক দিবসের দিন গোটা স্কুল সাজিয়ে ছাত্রীরা উদযাপন করলেও এ বছর ভাটা পড়েছে সেই আনন্দে। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীর নৃশংস খুনের ঘটনার বিচার এখনও মেলেনি। তাই এ বছর শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান ছোট করে হয় চার দেওয়ালের মাঝে। স্কুলের মেধাবী, তবে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রীদের হাতে স্কুলের তরফ থেকে আর্থিক কিছু সাহায্য তুলে দেওয়ার রীতি চলে আসছে। এই ধরনের ছাত্রীদের আগামী দিনে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যাতে কোনওরকম সমস্যায় পড়তে না হয়, সে চিন্তা করেই এদিন প্রধান শিক্ষিকার ঘরেই ১৯ জন ছাত্রীর হাতে সেই উপহার তুলে দিলেন শিক্ষিকারা। বাতিল রাখা হল ক্লাস রুম সাজানো থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব।
প্রতিবছর ক্লাসে র্যাঙ্ক করা ছাত্রীর উদাহরণ বর্তমান ছাত্রীদের দিতেন এই স্কুলের শিক্ষিকারা। সেই ছাত্রীর এমন করুণ পরিণতিতে আজ শোকস্তব্ধ শিক্ষিকারা। নির্যাতিতা ওই প্রাক্তন ছাত্রীর সম্পর্কে নানা কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় সেভাবে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউই। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ডাঃ নীরতা মুখোপাধ্যায় গত তিন বছর হল এই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি জানান, দায়িত্বভার নেওয়ার পর থেকেই প্রাক্তন এই ছাত্রীর প্রশংসা শুনেছেন অন্যান্য শিক্ষিকাদের মুখে। স্কুলের ছাত্রীরা প্রাক্তন তরুণীর এই নৃশংস ঘটনার পর একটি বিশেষ নাটক উপস্থাপনা করার কথাও জানিয়েছিল বিশেষ দিনে। তবে শিক্ষিকারাই ছাত্রীদের বোঝান, বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে এখন অনুষ্ঠান না করে পরবর্তীতে করা যাবে।
প্রধান শিক্ষিকার মতে, আগে এই নৃশংস ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির প্রয়োজন রয়েছে। এ বছর শিক্ষক দিবস স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীর কথা ভেবেই কাটলো শোকের আবহে। স্কুলের যে কোনও উদযাপনের দিন উপস্থিত থাকতেন তিলোত্তমা। শিক্ষিকাদের কথায়, ‘ও প্রতি বছর ফার্স্ট-সেকেন্ড হতো। খুব মেধাবী ছিল।' বড় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর চোখে। স্কুলের অন্যতম সেরা ছাত্রীর স্বপ্ন ও অধ্যাবসায় বেঁচে থাকুক প্রতিটি পড়ুয়ার মধ্যে, এমনটাই চাইছেন স্কুলের ছাত্রীরাও।