এই সময়: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় বিচার চেয়ে বুধবার রাত দখলের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন নির্যাতিতার পরিবার। এই কর্মসূচি থেকে নির্যাতিতার পরিবার রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করেছেন। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের অভিযোগ, মেয়ের মৃত্যুর পর লালবাজারের এক পুলিশকর্তা তাঁদের টাকার অফার করেছিলেন। এমনকী তাঁরা না-চাইলেও মেয়ের দেহ পুলিশই তাড়াহুড়ো করে দাহ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।নির্যাতিতার পরিবার একাধিক মারাত্মক অভিযোগ করলেও তৃণমূল তাঁদের এই বক্তব্যকে খণ্ডন করতে চাইছে না। জোড়াফুল নেতৃত্বের বক্তব্য, নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্যকে তাঁরা সম্মান দিতে চান। যে হেতু আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ-খুনের মামলায় এখন সিবিআই তদন্ত করছে, তাই নির্যাতিতার পরিবারের এই সব অভিযোগ সিবিআইয়ের খতিয়ে দেখা উচিত বলেও মনে করছে রাজ্যের শাসকদল।
নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্যকে সম্মান জানালেও তৃণমূল ভবনে বৃহস্পতিবার ব্রাত্য বসু, শশী পাঁজার মতো রাজ্যের মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে একটি ভিডিয়ো দেখানো হয়। 'এই সময়' এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। এই ভিডিয়োতে নির্যাতিতার পরিবারকে বলতে শোনা যাচ্ছে, টাকার অফারের বিষয়টি, 'মিথ্যা গল্প। এমন কোনও কথা (পরিবারের তরফে) বলা হয়নি। আমরা কাউকে কিছু বলিনি। আমরা বিচার চাইছি।'
যদিও বুধবার রাতে নির্যাতিতার বাবা বলেছেন, 'আমার মেয়ের দেহ তখনও শায়িত। অন্য একটি ঘরে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ডিসি (নর্থ) টাকা অফার করেছিলেন। তার যা উত্তর দেওয়ার, আমি তাঁকে দিয়েছিলাম।' ভিডিয়োর বিষয়ে নির্যাতিতার পরিবারের তরফে বলা হয়, 'সে দিন রাতে ওরা এসে ভিডিয়ো করে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা যে কিছু বলিনি— এটা বলতে চাপ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ চাপ দিয়েছিল। বোঝানো হয়েছিল, পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বললে তদন্তে ক্ষতি হবে। তখনও তো কেসটা পুলিশের হাতেই ছিল।'
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে শশী পাঁজা বলেন, 'আমরা পরিবারের আবেগকে সম্মান করি। দু'টি ভিডিয়ো পাওয়া যাচ্ছে। আগের একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা বলছেন, কেউ টাকা অফার করেনি। এটা মিথ্যা কথা। এখন আর একটি ভিডিয়ো দেখা যাচ্ছে। ওঁদের বয়ান নিয়ে আমরা পোস্ট মর্টেম করতে চাই না। ওঁরা মেয়েকে হারিয়েছেন। ওঁরা যদি কিছু বলেন, আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। সিবিআই বরং ওঁদের এই কথা শুনুক।'
ব্রাত্যর যুক্তি, 'রাজনৈতিক দলগুলি চাপাচাপি করছে। বিরোধী দলগুলি যদি তাঁদের মনের উপরে কোনও চাপ তৈরি করে, সেটা তাদের ব্যাপার। তাঁরা যা-ই বলুন না কেন, আমরা সংবেদনশীল ভাবে বিষয়টি দেখতে চাই।'
কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা অফার করা ছাড়াও শ্মশানে নির্যাতিতার শেষকৃত্যের খরচ ফ্রি করে দেওয়া হয়েছিল বলেও পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে। নির্যাতিতার পরিবারের তরফে বুধবার রাতে বলা হয়েছে, 'আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে মৃতদেহ নিয়ে চলে যায় পুলিশ। দেহ দেখতেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। বারবার প্রিন্সিপালের ঘরে যেতে বলেছিল পুলিশ।'
রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, নির্যাতিতার পরিবার এই কথাগুলি কি সিবিআইকে বলেছে? তাঁর কথায়, 'টাকা অফারের অভিযোগ ২৩ দিন পরে আন্দোলনের মঞ্চে তুলতে হলো কেন? বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিতবাহী এই কথা তো আগেই সিবিআই-কে বলা উচিত ছিল। যদি ওঁরা সিবিআইকে এই স্টেটমেন্ট দিয়ে থাকেন, তাহলে সিবিআইয়ের উচিত ছিল ওই পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। সিবিআই কি কাউকে জিজ্ঞাসবাদ করেছে?'
একই সঙ্গে 'চাপের মুখে' কেউ যদি নির্যাতিতার পরিবারকে দিয়ে কোনও ভিডিয়ো করিয়ে থাকে, সেই কথাও এতদিন কেন তাঁরা বলেননি— সে প্রশ্নও তুলেছেন কুণাল।