বারুদের গন্ধ এখন অতীতই, ফুটবল অ্যাকাডেমির পর লালগড় পেল জিম
বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: একদা মাওবাদীদের গড় ছিল লালগড়। স্থানীয় যুবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র। গোলা-বারুদ ও বহু খুনের সাক্ষী জঙ্গলমহলের এই প্রান্তিক এলাকা। সেই চিত্র বদলে গিয়েছে। এলাকার তরুণ প্রজন্ম মেতে উঠেছে ফুটবল খেলায়। লালগড় অ্যাকাডেমিতে প্রশ্রিক্ষণরত ছেলেরা রাজ্যের নামী ফুটবল ক্লাব ও জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্নপূরণে জেলা পুলিস প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলা পুলিসের উদ্যোগে ফুটবল অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের জন্য আধুনিক মানের জিমের উদ্ধোধন হল।
ঝাড়গ্ৰাম শহর থেকে দহিজুড়ির রাস্তা দিয়ে সহজেই এখন লালগড় পৌঁছনো যায়। কংসাবতী নদীর উপর ব্রিজ তৈরি হয়েছে। ঝা চকচকে রাস্তা। ব্যস্ত এস আই চত্বরে সাধারণ মানুষের ভিড় সবসময় লেগে থাকে। স্থানীয় স্কুলগুলোতে নিরুপদ্রবে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চলছে। লালগড় অ্যাকাডেমিতে স্থানীয় মূল নিবাসী পরিবারের ছেলেমেয়েরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। লালগড় থানা থেকে হাঁটাপথে কিছুটা দূরে লালগড় ফুটবল অ্যাকাডেমি। মার্শাল টুডু, বিশ্বজিৎ মাল, নয়নতারা সোরেনরা স্বপ্ন দেখছে রাজ্যের নামী ফুটবল ক্লাব ও জাতীয় দলে খেলার। তাঁদের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছেন কোচ দশরথ সিং। ফুটবল খেলার পরিকাঠামো উন্নয়নে জেলা পুলিস সহযোগিতার হাত আগেই বাড়িয়ে দিয়েছিল। লালগড় ফুটবল অ্যাকাডেমি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে গেলে আধুনিক মানের জিম, পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। সেই ব্যবস্থাও এবার করা হল। বৃহস্পতিবার জেলা পুলিসের উদ্যোগে ফুটবল অ্যাকাডেমির জিমখানার উদ্বোধন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলার একাধিক পুলিস আধিকারিক। প্রশিক্ষক দশরথ সিং বলেন, আগে খেলাধুলার কোনও পরিকাঠামো ছিল না। সেই সময়ে অনেকেই ভুল পথে চলে গিয়েছিল। সেই চিত্রের বদল ঘটছে। লালগড়, বেলপাহাড়ী, সাঁকরাইল এলাকার ছেলেরা এই ফুটবল অ্যাকাডেমিতে এসে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া চার যুবক কলকাতার উত্তরপাড়া ফুটবল অ্যাকাডেমি ও বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমিতে চান্স পেয়েছে। খেলোয়াড়দের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য ও আধুনিক মানের জিমের অভাব ছিল। জেলা পুলিসের সহযোগিতায় এদিন জিমের উদ্বোধন হয়েছে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধারাবাহিক এই উদ্যোগ জঙ্গলমহলে খেলাধুলোর মান উন্নয়নে সাহায্য করবে। কলেজ পড়ুয়া মার্শাল টুডু বলেন, চারবছর ধরে এই অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। কলকাতার বড় ক্লাব বা জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি। প্রশিক্ষণের জন্য এবার কলকাতায় যেতে হবে না। এখানেই সেই সুবিধা পাব। নয়নতারা সোরেন বলেন, মেসি, নেইমারদের খেলা দেখে ভালো লাগে। অ্যাকাডেমি থাকলেও এখানে ভালো জিমখানা ছিলনা। এই জিমখানার খুব প্রয়োজন ছিল। একদা মাওবাদী আন্দোলনে জড়িত স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমার নাতিকে লালাগড় ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেছি। আমি চাই ফুটবল খেলার মধ্যে দিয়ে সে জীবনের দিশা খুঁজে পাক। ঝাড়গ্ৰাম জেলার অ্যাডিশনাল এসপি গোলাম সারওয়াল সাংবাদিক সম্মেলন করে এদিন বলেন, লালগড় ফুটবল অ্যাকাডেমি ২০১৮ সালে গড়ে তোলা হয়। এদিন অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের জন্য জিমখানার উদ্বোধন করা হল। পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী সামনের দিনে এই অ্যাকডেমির ছেলেরা বড় ক্লাব বা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবে। জিমের উদ্বোধনে পুলিস। নিজস্ব চিত্র