• সিঁদ কেটে ঘরে প্রবেশ মাথা ফাটিয়ে বধূকে খুন
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ভীমপুর: সিঁদ কেটে সাধারণত চোর-ডাকাতরা ঢোকে। ঘরের জিনিসপত্র চুরি করে চম্পট দেয়। কিন্তু কোনও আততায়ী সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকেছে, এমন ঘটনা একরকম নজিরবিহীন! আর সেই নজিরবিহীন ঘটনারই সাক্ষী থাকল ভীমপুর থানার ডিগ্রি এলাকা। গভীর রাতে দেওয়াল কেটে ঘরে ঢোকে বধূর মাথা ফাটিয়ে পালিয়ে চম্পট দেয় ওই আততায়ী। বাড়ির কেউই টেরই পেলেন না! রাতভর অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন সাথী বিশ্বাস (২৫) নামে ওই বধূ। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে যাওয়ার পথেই সব শেষ। মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করা হয় বলে পুলিসের প্রাথমিক ধারণা। বধূর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আশুতোষ বিশ্বাস নামে এক পড়শিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। রাত পর্যন্ত খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায় তদন্তকারীরা। 

    এদিন সকালে ঘরের মধ্যে সাথীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের লোকজন। তাঁরা থানায় খবর দেন। পুলিস গিয়ে উদ্ধার করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে সাথীকে। সেখান থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়। মাঝপথেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মারা যান। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালেই ময়নাতদন্ত করা হয়। খুনের সময় বধূকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল কিনা, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বধুর বাড়ির লোক তৃণমূল করেন। অন্যদিকে ধৃত ব্যক্তি এলাকার সক্রিয় বিজেপি কর্মী বলেই পরিচিত।  কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, ‘ভীমপুরে গৃহবধূকে খুনের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি। ফরেন্সিক টিম দিয়ে ঘটনাস্থলের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হচ্ছে।’

    টিন দিয়ে ঘেরা দু’টি বাড়িতে স্ত্রী সাথী, এক সন্তান ও মা শুভা বিশ্বাসকে নিয়ে থাকেন রামপ্রসাদ বিশ্বাস। তবে, বিগত পাঁচ মাস ধরে রামপ্রসাদ শিলংয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজের জন্য রয়েছেন। বুধবার রাতে দু’টি বাড়ির একটিতে সাথী ঘুমিয়েছিলেন। ওই ঘরের পিছনের দেওয়ালের নীচে বড়ো গর্ত দেখা যায়। ওই গর্ত খুঁড়ে অভিযুক্ত আশুতোষ ঘরে ঢুকে ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। তারপর বধূর মাথায় ভারি জিনিস দিয়ে আঘাত করে সে পালিয়ে যায়। তখন বাড়িতে কেউ ছিলেন না। নাতিকে নিয়ে পাশেই বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন শাশুড়ি।‌ বধুর মামাশ্বশুর সুজিত কুমার অধিকারী বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল। তাই ওরা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। সাথীর আসা কথা থাকলেও, আসেনি। আমরা তৃণমূল করি। পুলিস যাকে ধরেছে সে বিজেপি করে।’

    সাথীর খুড়তুতো শাশুড়ি চম্পা বিশ্বাস বলেন, ‘আমি সকালে বাড়ির কয়েকটি ব্যাগে সাথীর ভোটার কার্ড আধার কার্ড সহ বিভিন্ন নথিপত্র পড়ে থাকতে দেখি। তখনই আমার সন্দেহ হয়। আমি ছুটে গিয়ে ওদের দরজা খুলে দেখি বউমা অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মাথায় হাত দিতেই আমার হাত রক্তাক্ত হয়ে যায়।’ তৃণমূলের কৃষ্ণনগর এক ব্লকের উত্তরের সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘রামপ্রসাদ আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত। ও সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। একজন বিজেপি কর্মী আমাদের দলের সদস্যর স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুন করেছে। পুলিস তদন্ত করছে।’  ভীমপুরের সিপিএম নেতা শুভেন্দু ঘোষ বলেন, ‘আমরা চাই গোটা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। যে ব্যক্তিকে পুলিশ ধরেছে সে বিজেপি কর্মী বলে আমরা জানতে পেরেছি।’ স্থানীয় বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য চিত্ত বিশ্বাস বলেন, ‘এই অভিযোগের কোনোও ভিত্তি নেই। আশুতোষ দলের কোনও পদে নেই। আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি।’  টিনের দেওয়ালের নীচে সিঁদ। (ইনসেটে) নিহত বধূ। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)