• দুর্গাপুরে ভুয়ো কলসেন্টার খুলে প্রতারণা, পুলিসের জালে ১৩
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কলকাতা থেকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে দুর্গাপুরে ভুয়ো কল সেন্টার চালাচ্ছিল কলকাতার সাইবার প্রতারকরা। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে একটি বড় বাড়ির তৃতীয় তলা ৫০হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে মানুষ ঠকানোর কারবার চলছিল। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, আমেরিকার বিত্তশালীরাই ছিল তাদের টার্গেট। কম্পিউটার, ল্যাপটপে অ্যান্টিভাইরাস লোড করার নামে চলত প্রতারণা। মঙ্গলবার রাতে আসানসোল সাইবার থানার পুলিস ও গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান চালিয়ে ১৩জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে। যাদের মধ্যে ১২জনেরই বাড়ি কলকাতায়। একজনের বাড়ি হুগলির চুঁচুড়ায়। তাদের কাছ থেকে ১২টি ল্যাপটপ, ১৩টি মোবাইল, পাঁচটি হেডফোন উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এটি বড় চক্র। শুধু আমেরিকা নয়, এই চক্রের জাল অন্যান্য দেশেও রয়েছে। 

    ডেপুটি পুলিস কমিশনার অরবিন্দ আনন্দ বলেন, গোপন সূত্রে ভুয়ো কলসেন্টারের খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। ১৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ছ’জনকে আমরা বুধবার নিজেদের হেফাজতে নিয়েছি। আমেরিকার যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। 

    পার্কস্ট্রিট সহ বিভিন্ন এলাকার যুবকরা সন্ধ্যা হলেই পাড়ি দিত দুর্গাপুরের উদ্দেশে। কখনও ট্রেনে কখনও বাসে তারা আসত দুর্গাপুর। এখানে রাত কাটিয়ে ফের ভোরে ট্রেন, বাস ধরে বাড়ি ফিরত। ব্যাগেই থাকত ব্রাশ-পেস্ট সহ নানা সামগ্রী। রাস্তাতেই দাঁত মাজা ও সেভিং করার কাজ সেরে নিত। কেন যুবকরা আসে দুর্গাপুর? পর্দাফাঁস করল পুলিস। জানা গিয়েছে, সিটি সেন্টারে বাড়ির একাংশ ভাড়া নিয়ে খুলেছিল ‘কলসেন্টার’। কলসেন্টারের মতোই প্রত্যেকের সামনে ল্যাপটপ, হাতে মোবাইল। কিন্তু এই কলসেন্টার চালু হতো রাতে। বন্ধ হয়ে যেত ভোরে। কারণ আমেরিকার দিনেরবেলায় ‘শিকার’কে অ্যান্টি ভাইরাসের টোপ দেওয়া হতো। অভিযোগ, ফ্রি অ্যান্টিভাইরাসকে বহুমূল্যে বিক্রি করে এভাবেই শিক্ষিত আমেরিকানদের ধোঁকা দিত কলকাতার এইট-নাইন পাশ এই যুবক দল। মঙ্গলবার গভীর রাতে কলসেন্টার চালু থাকা অবস্থাতেই হানা দেয় পুলিস। 

    কিন্তু কালকাতা ছেড়ে দুর্গাপুর কেন? পুলিস জানিয়েছে, কালকাতায় এই ধরনের কলসেন্টার চালাতে গিয়ে তারা ধরা পড়েছিল। পরে বিধাননগরে চেষ্টা করে। সেখানেও পুলিসের তাড়া খেয়েছে। তাদের লক্ষ্য ছিল এমন কোনও জায়গা, যেখান থেকে কলকাতা সহজেই যাতায়াত করা যায়। তখনই তাদের মাথায় আসে দুর্গাপুরের নাম। 

    কীভাবে অপারেশন চালাত গ্যাংটি? এখানেই যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় রয়েছে। পুলিস প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, এরা শুধু কল করে মানুষকে ‘টুপি’ পরানোর কাজটা করত। চক্রের মাথারা‌ই কাদের টার্গেট করতে হবে সেই তালিকা পাঠিয়ে দিত। এরপর ডলারে আসা অর্থ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে তা ভারতীয় মুদ্রায় ভাঙানো হতো। সেখানে চীনের যোগসূত্রও পাওয়া যাচ্ছে বলে পুলিসের দাবি।
  • Link to this news (বর্তমান)