• ‘আমিও তো নারী, এই লাঞ্ছনা আমার প্রাপ্য?’ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • আর জি করে অভয়ার নৃশংস মৃত্যুর প্রতিবাদ। আন্দোলন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে পথে নামা অগুনতি মানুষকে দেখে মনে হয়েছিল, এরপর অধিকারের জন্য, নিরাপত্তার জন্য নিত্যদিনের লড়াইটা হয়তো থামবে। তাই বুধবার রাতে গিয়েছিলাম পা মেলাতে। বিচার চাইতে। কিন্তু ধাক্কা খেল আমার ভাবনা, আশাভরসা। আতঙ্ক ঘিরে ধরল আমাকে। এক নারীর জন্য বিচার চাইতে গেলাম। কিন্তু ওরা ভুলে গেল, আমিও তো একজন নারী! অশ্রাব্য ভাষা, ঘেরাও করে মারার চেষ্টা, হেনস্তা... মরেও তো যেতে পারতাম! এ কেমন বিচার চাওয়া? এটাই কি আন্দোলনকারীদের পরিচয়? এটাই কি তাদের আচরণ? সবাই তো এমন হতে পারে না। তাহলে কারা ঢুকে পড়েছে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাঝে? কারা ঘুরিয়ে দিচ্ছে আন্দোলনের অভিমুখ? নারীর অধিকারের জন্য গড়ে ওঠা মঞ্চে যদি আর একটি মেয়েকে অসম্মানিত হতে হয়, তাহলে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে—কী নিয়ে আন্দোলন, কীসের প্রতিবাদ সেটাই আমরা জানি না।

    শ্যামবাজারে পৌঁছনোর পরই কয়েকজন আমাকে দেখে এগিয়ে এসেছিলেন। কথা বলছিলেন। কেউ কেউ গানও গাইছিলেন। আমি চেয়েছিলাম কিছুক্ষণ ওঁদের মধ্যে থাকতে। শুনেছিলাম অভয়ার বাবা-মা এসেছেন। ওঁদের কথা শুনতে চেয়েছিলাম। ওখানে পৌঁছে মোমবাতি জ্বালাই। হঠাৎই একদল লোক ঠেলে সামনে চলে আসে। প্রায় গায়ের উপর উঠে পড়ে। আমাকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’স্লোগান দিতে থাকে। কারা ওরা? কী উদ্দেশ্যে ওখানে গিয়েছিল? জানি না। কিন্তু একটা বিষয় বুঝি, এভাবে বিচার চাওয়া যায় না। পাওয়াও যায় না। ওই পরিস্থিতিতেও আমি ওদের থামাবার চেষ্টা করেছি। আমার গাড়িতে যখন ওরা মারতে শুরু করে, তখনও কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু ওরা কোনও কথা শোনেনি। 

    মানববন্ধন মানে, মানুষ যেখানে মানুষের হাত ধরবে। সেখানে যদি এমন কিছু লুম্পেন এবং হুলিগান ঢুকে পড়ে, মেনে নেওয়া যায় না। তারা বিচারের কিছুই বোঝে না। শুধু চিৎকার করছিল। কয়েকজন মদ্যপও ছিল। এরা নিজস্ব কিছু ‘স্যাডিস্টিক প্লেজার’ চরিতার্থ করার চেষ্টা করে। আমার সঙ্গে সেটাই হয়েছে। এই লাঞ্ছনার বিচার কে দেবে? আমি কিন্তু সেলিব্রিটি হিসেবে যাইনি। মানুষ হিসেবে গিয়েছিলাম। তারপরও এতকিছু সহ্য করতে হল। অভিনেত্রী নয়, মানুষ হিসেবে বলছি... এরপরও মানবিক দিক থেকেই এই আন্দোলনের পাশে থাকব।
  • Link to this news (বর্তমান)