• ‘আপনি মানুষ না পশু?’ কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ, আমৃত্যু কারাদণ্ড বাবার
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ন’বছর পর বিচার পেল নির্যাতিতা। ১৪ বছরের মেয়েকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিল আদালত। পাশাপাশি তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। সেই টাকা তুলে দিতে হবে নির্যাতিতার হাতে। পাশাপাশি বিচারক দক্ষিণ ২৪ পরগনার আইনি সহয়তা কেন্দ্রকে (লিগ্যাল এইড) নির্দেশ দেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্যাতিতা কিশোরীর হাতে চার লক্ষ টাকা তুলে দিতে হবে। 

    বৃহস্পতিবার আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য ওই রায় দিতে গিয়ে অপরাধীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি মানুষ, না পশু? জঘন্যতম কাজ করেছেন। তাই কড়া সাজা দিতে বাধ্য হলাম।’ 

    আর জি কর কাণ্ডের উত্তাল পর্বে খোদ শহরে ঘটে যাওয়া ৯ বছর আগের মামলায় এই ধরনের রায় গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন আদালতের প্রবীণ আইনজীরা। সরকারি আইনজীবী মাধবী ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, ‘মামলার গুরুত্বের কথা চিন্তা করে আমরা আদালতের কাছে দোষী সাব্যস্ত বাবার কড়া সাজার দাবি জানিয়েছিলাম। আদালত অপরাধীর বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা খুশি। এই রায় সমাজে একটা আলাদা বার্তা দেবে।’ যদিও রায়দানের পর সাজাপ্রাপ্ত বাবার মধ্যে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি বলে আইনজীবীরা জানান। 

    আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার কড়েয়া থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ধর্ষণের কয়েক মাস আগে থেকেই কিশোরীর উপর নানাভাবে যৌন নির্যাতন চালাত বাবা। পরিস্থিতি মোড় নেয় যেদিন ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ১৪ বছরের ওই কিশোরীর উপর নির্যাতনের পরই সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। বাবাও ঘটনার কথা কাউকে জানাতে নিষেধ করে। হুমকি দেয়। কিন্তু মেয়েটি সুযোগ বুঝে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে প্রতিবেশীদের জানায়। তারা তাকে থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিস পকসো আইনে মামলা দায়ের করে বাবাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে দ্রুত চার্জশিট দেয়। কিশোরীটি বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয়। মামলায় সাক্ষ্য দেন সাতজন। বিচার চলাকালে কিশোরী ভিডিও কনফারেন্সে তার বাবাকে শনাক্তও করে। সরকারি আইনজীবী জানান, ঘটনার বেশ কয়েক বছর আগে মেয়েটির মা মারা যায়। তারপর মাঝে মধ্যেই কিশোরীর উপর অত্যাচার চালাত বাবা। এমনকী তাকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি শিবনাথ অধিকারী বলেন, ‘মেয়েটি শেষ পর্যন্ত যে ন্যায়বিচার পেয়েছে, এটাই আমাদের কাছে সন্তোষের বিষয়।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)