• ‘সিবিআই কী করছে? আর কবে উঠবে কর্মবিরতি?’ ট্রলিতে শুয়ে প্রশ্ন রোগীর
    বর্তমান | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভোর পাঁচটায় পাথরপ্রতিমা থেকে বেরিয়েছিলেন বৃদ্ধ মুকুল মাজি। এস এস কে এমে পৌঁছে যান সকালেই। চিকিৎসককে দেখাতে দুপুর দেড়টা হয়ে যায়। ট্রলিতে শুয়ে মুকুলবাবুর প্রশ্ন, ‘কবে উঠবে কর্মবিরতি?’ 

    দেখতে দেখতে প্রায় এক মাস হতে চলল কর্মবিরতির। রোগীর পরিজনদের বক্তব্য, ‘পরিষেবা খানিক হলেও সচল হয়েছে। কিন্তু ভোগান্তি কাটেনি।’ মাসখানেক ধরে হাসপাতালে ভর্তি মা। তাঁকে চিকিৎসক দেখছেন বলে জানালেন ছেলে। তবে পরিষবা নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। তাঁর বক্তব্য একটাই, ‘সঠিক পরিষেবার খুব দরকার।’ 

    বৃদ্ধ মুকুলবাবু স্ট্রেচারে শুয়ে বললেন, ‘এখনও দোষীদের ধরা গেল না? সিবিআই কী করছে? রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এসবের মাঝে পড়ে আমরা কর্মবিরতির ফল ভুগছি।’ ‘আর কবে? কবে শেষ হবে কর্মবিরতি?’ একই প্রশ্ন মেটিয়াবুরুজের নুর ইসলামের। স্ট্রোক হয়েছে বাবার। তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন এস এস কে এমে। বললেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে ইমারজেন্সিতে এসেছিলাম। তখন বলেছিল, ওপিডিতে নিয়ে আসবেন। তাই এখানে নিয়ে এলাম। কিন্তু এখন বলছে, বেড নেই। বলে রেফার করে দিল।’ 

    বিচার কবে আসবে? আদৌ আসবে কি না, রাজনীতি হচ্ছে কি হচ্ছে না? এসব প্রশ্নের মধ্যে প্রবেশই করতে চান না নুর। শুধু বললেন, ‘আব্বা তো চিকিত্সা পেল না। কর্মবিরতি যেন উঠে যায়। আব্বার মতো অবস্থা যেন কারও না হয়।’ দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে চিকিৎসককে দেখানোর পর ওষুধ নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে জুব্বার মণ্ডল। তিনি চাষ করেন। ভোরবেলায় বেরিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। তাঁর অ্যালার্জির সমস্যা। মাসে একবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসতে হয়। জুব্বার ওষুধের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘সেই ভোরে বেরিয়েছি। এত দেরি কখনও হয় না। কী বলব বলুন তো! বিচার তো আমরাও চাইছি। কিন্তু বিচারের জন্য এতদিন কর্মবিরতি! আর কতদিন চলবে?’

    ৯ আগস্ট থেকে বক্ষ বিভাগে ভর্তি শাহিদ বিশ্বাসের মা। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা পেশায় কৃষক শাহিদ বলেন, ‘প্রথম দিনের পর ডাক্তারবাবুরা তেমন আসেননি। পুরোপুরি পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বড় ডাক্তাররা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।’ শাহিদের বক্তব্য, ‘একটাই কথা বুঝি, অন্যায় হয়েছে। কিন্তু তার জন্য শুধু আমাদের কেন শাস্তি পেতে হবে? ডাক্তারবাবুরা কাজে ফিরুন, এটাই শুধু চাই।’
  • Link to this news (বর্তমান)