• রাতের পথ দখলেই শ্লীলতাহানি, 'জাস্টিস' করবে কে?
    এই সময় | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: ধর্ষণ, যৌন হেনস্থার বিরোধিতা করে রাত দখলের ডাক দিচ্ছেন মেয়েরা। কর্মসূচিতে সামিল হচ্ছেন সংবেদনশীল সহ-নাগরিকরা। ১৪ অগস্ট হোক বা ১ কিংবা ৪ সেপ্টেম্বরের রাত - দখলের জমায়েতে বেড়া ভাঙছে বয়স, লিঙ্গ, জাতি-ধর্মের। কিন্তু এই সব আন্দোলন, দখল, জমায়েতেই একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে!প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে কড়া ধারায় মামলা রুজু করছে পুলিশ। কিন্তু আরজি কর ইস্যুতে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের বিরুদ্ধে ডাকা মিছিল, জমায়েত, সমাবেশে তেমন কাজই করার সাহস কী ভাবে হয়, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

    কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ তারিখ, মানে বুধবার রাতে গড়িয়ায় ৬ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে কর্মসূচিতে এক ব্যক্তি মেয়েদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন। অভিযোগ, তিনি মদ্যপ ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হতে অভিযুক্তকে ঘিরে ধরে মারমুখী হয়ে ওঠে জনতা। পরে পুলিশ তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যায়। শ্লীলতাহানির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    সেই রাতেই যাদবপুর ৮বি-র জমায়েত থেকে আনন্দ মণ্ডল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি পেশায় রেস্তোরাঁর শেফ। তাঁর বিরুদ্ধেও মহিলার সঙ্গে অশালীন ও অভব্য আচরণের অভিযোগ। আনন্দ নিজেও আবার পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ১০-১২ জনের একটি দল তাঁর উপর চড়াও হয়ে মারধর করে। তদন্ত শুরু করেছে যাদবপুর থানা।

    পাটুলি থানা এলাকায় আরও একটি ঘটনায় এক মহিলার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। মহিলার অভিযোগ, এক যুবক রাস্তায় তাঁর পথ আটকে কুরুচিকর মন্তব্য করেন ও অশালীন ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ রাজীব কুমার নন্দী নামে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজীবও পাল্টা মারধরের অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ দু'পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নথিভুক্ত করেছে।

    এর আগেও, গত রবিবার ১ সেপ্টেম্বর ধর্মতলায় নাগরিক মিছিল ও রাত দখলের কর্মসূচিতে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে। ব্যাপক গোলমাল হয়। শ্লীলতাহানির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৪ অগস্ট রাতেও এ ধরনের একাধিক অভিযোগ ওঠে।

    কিন্তু প্রতিবাদের রাতেই এমন আচরণ কেন? নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ মনে করেন, এমন সব মানুষই বাসে বা পুজোর ভিড়ে এ ধরনের আচরণ করে এসেছে। তাঁর কথায়, 'ফলে এরা ভাবছে, প্রতিবাদের এই ভিড় আর পুজোর ভিড়ের কোনও ফারাক নেই। দিব্যি নির্যাতন করে নিস্তার পাওয়া যাবে। কিন্তু সময় যে বদলাচ্ছে, সেটা এরা আন্দাজ করতে পারেনি।'

    প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন অফ স্টুডেন্টস দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী এই মানসিকতার নেপথ্যে তিনটি কারণ সামনে আনছেন। তাঁর বক্তব্য, 'প্রথমত, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর নির্যাতনকারীদের মধ্যে এই রোগ সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, এত মেয়ে রাত দখলের স্পর্ধা দেখাচ্ছে, সেটা নির্যাতনকারীদের বেপরোয়া করে তোলে। আর তৃতীয়ত, পুলিশ-প্রশাসনকে এদের বিন্দুমাত্র ভয় নেই। আইনশৃঙ্খলা নিয়েও মাথাব্যথা নেই।'

    তিনিও মনে করেন, যা খুশি তাই করে রেহাই পাওয়া যাবে, এমন মানসিকতা থেকেই এ সব করছে এই অভিযুক্তরা। রাত দখলের প্রথম কারিগর রিমঝিম সিনহার মতে, 'বহু বছর ধরে ঘটে চলা এই নির্যাতনগুলোকে এত অল্প দিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা কাঠামোগত পরিবর্তনের দাবি তুলছি। স্কুলস্তর থেকে লিঙ্গ সচেতনতামূলক পাঠ্যের দাবি করছি।'

    রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনও প্রস্তাব এলে সেটা রাজ্য সিলেবাস কমিটির কাছে আলোচনার জন্য পাঠানো যেতেই পারে।'
  • Link to this news (এই সময়)