• প্রশ্ন ফাঁস, মাফিয়া-রাজে সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ দুই জুনিয়র
    এই সময় | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • মণিপুস্পক সেনগুপ্ত

    এই সময়, মুর্শিদাবাদ: সিবিআইয়ের হাতে ধৃত আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের হাত কি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত লম্বা ছিল? সেখানেও কি দুর্নীতি চক্র চালাতেন? অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পেতে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হতো সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ জুনিয়র চিকিৎসকদের। হস্টেলে কে ভালো ঘর পাবেন, তা-ও সন্দীপ-ঘনিষ্ঠরা ঠিক করে দিতেন বলে ওই কলেজের চিকিৎসকদের একাংশের দাবি।এমনকী, ডাক্তারি পাশ না করেও কনভোকেশনে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ এক ডাক্তারি ছাত্রের বিরুদ্ধে। যেখানে বিরূপাক্ষ বিশ্বাস ও অভিক দে-র মতো সন্দীপের ঘনিষ্ঠ দুই চিকিৎসককেও নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, হাসপাতালের দুই চিকিৎসক সন্দীপের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।

    সূত্রের খবর, তাঁদেরই একজন যখন ওই মেডিক্যাল কলেজে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলেন, তখন তিনিই একমাত্র পরীক্ষার্থী ছিলেন। কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনৈতিক ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলার অভিযোগও উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, ওই অনুষ্ঠানের দায়িত্ব মূলত ছিল তাঁদেরই একজন, সুমন বিশ্বাসের উপরে। আগে কলকাতার স্বাস্থ্য দপ্তরে কাজ করলেও বেশ কিছু বেনিয়মের কারণে তাঁকে বীরভূমের সিউড়িতে বদলি করা হয় বলে অভিযোগ।

    সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে আসেন তিনি। মুর্শিদাবাদের চিকিৎসক মহলের একাংশের দাবি, এর পরই নর্থবেঙ্গল লবির সঙ্গে সুমনের যোগসূত্র তৈরি হয়। প্রভাব খাটিয়ে তাঁর স্ত্রীকেও ওই মেডিক্যাল কলেজে বদলি করে আনার অভিযোগও উঠেছে সুমনের বিরুদ্ধে।

    সুমনের দাবি, 'আমি এবং আমার স্ত্রী দু'জনেই নিজেদের যোগ্যতায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে চাকরি করছি।' আর আন্দোলনে নামা মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক কৌস্তভ গড়াই বলেন, 'অন্য মেডিক্যাল কলেজের মতো আমাদের কলেজেও মাফিয়া-রাজ চলে। এটা শেষ করতেই আমাদের আন্দোলন।'

    পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও তিনি কনভোকেশনে অংশ নিয়েছিলেন বলে সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ আরেক জুনিয়র চিকিৎসক ঋত্বিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে ঋত্বিকের সাফাই, 'আমার বন্ধুরা কনভোকেশনে ছিল। তাই সবার অনুমতি নিয়েই আমি যোগদান করেছিলাম। এতে কোনও অন্যায় নেই।'

    মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মাফিয়া-রাজ বন্ধ করতে অতীতে মুখ খুলেছিলেন চিকিৎসক রঞ্জন ভট্টাচার্য। অভিযোগ, সে কারণে তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, 'মুর্শিদাবাদে সন্দীপ ঘোষের সিন্ডিকেট নিয়ে আমি সরব হয়েছিলাম। সুমন বিশ্বাস ও তাঁর বাহিনী বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। অর্থের বিনিময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে চলে থ্রেট কালচারও।'

    মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অমিত দাঁ যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'কলেজে কোনও অনৈতিক কাজ আমার চোখে পড়েনি। আমি অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পরে অন্তত এই মেডিক্যাল কলেজে কোনও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে আমি দায়িত্বে আসার আগে কী হয়েছে, বলতে পারব না।'
  • Link to this news (এই সময়)