‘বিশ্বভারতীকে আরজি কর হতে দেব না’, বিক্ষোভের মুখে পুলিশ
এই সময় | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়, শান্তিনিকেতন: বিশ্বভারতীর ছাত্রীর মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে বিতর্ক জড়িয়েছে পুলিশ। অনামিকা সিং নামে ভিন রাজ্যের ওই ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই আম্রপালী হস্টেলে ছুটে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতিতে হস্টেলে ঢোকায় পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান আবাসিক ছাত্রীরা। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে বেনারস থেকে শান্তিনিকেতনে আসেন তাঁর বাবা-মা ও ভাই।সংবাদমাধ্যমে ছাত্রীর মা বলেন, ‘কারও চাপের কারণেই এই ঘটনা ঘটালো মেয়েটা।’ তবে কে তাঁর মেয়েকে চাপ দিত, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। হস্টেল এবং পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে প্রচুর টাকার প্রয়োজন পড়ছিল অনামিকার। ছাত্রীমৃত্যুর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল বিশ্বভারতী। আরজি কর থেকে শিক্ষা নিয়ে যথেষ্ট সাবধানী পদক্ষেপ করছে পুলিশও।
তাই ছাত্রীর মৃতদেহ বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় এ দিন৷ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে খবর পেয়ে ঘটনার তদন্তে এসে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ছাড়াই শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ হস্টেলে ঢোকে বলে অভিযোগ। এতেই হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা মধ্যরাত পর্যন্ত পুলিশকে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, এখানেও তথ্য লোপাটের চেষ্টা চলছে।
স্লোগান দেওয়া হয়, ‘বিশ্বভারতীকে আরজি কর হতে দেব না’। সেই সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা প্রশ্ন তোলেন হস্টেলে কেন মহিলা নিরাপত্তারক্ষী নেই। সিসি ক্যামেরা কেন বসানো হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। ছাত্রীদের মধ্যে দেবমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মধ্যরাতে পুলিশ আসছে মেয়েদের হস্টেলে, তা-ও বিশ্বভারতীর কোনও অধিকারিক নেই। এটা কী ভাবে সম্ভব? তথ্য লোপাট করার চক্রান্ত৷ আর মেয়েদের হস্টেলের গেটে সিসি ক্যামেরা নেই, বিশ্বভারতীর হাসপাতালের কোনও পরিকাঠামো নেই৷ আমরা এর বিচার চাই৷’
ঘেরাও-বিক্ষোভের খবর পেয়ে রাতেই ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিবের নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায়, বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়ালরা ঘটনাস্থলে যান। বিশ্বভারতীর তরফে পৌঁছন ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো, নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়, ছাত্র পরিচালক গণেশ মালিক৷ তাঁদের ঘিরেও স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা৷ পুলিশ জানায়, তথ্য যাতে লোপাট না হয়, তার জন্য ঘরটিকে সিল করতে তড়িঘড়ি ঢুকতে হয়েছে। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।
অশোক মাহাতো বলেন, ‘একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারকে খবর দিয়েছি৷ আর আমরা হাসপাতালে ছিলাম। তাই হস্টেলে পৌঁছতে দেরি হয়েছে।’ নিরাপত্তারক্ষীর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্বভারতীতে মাত্র ১৫ জন মহিলা নিরাপত্তারক্ষী। ৫ জন করে আসেন৷ তাই সব হস্টেলে মহিলা রক্ষী রাখা যায় না৷ তবে একটা ঘটনা যখন ঘটেছে, ছাত্রীদের দাবি মতো এই হস্টেলে মহিলা রক্ষী রাখা হবে৷’
রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে খবর পেয়েছি আমরা৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে কোনও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত করা হবে৷ আর যাতে কোনও রকম তথ্যপ্রমাণ লোপাট না হয়, তাই পুলিশ হস্টেলের ঘরটি তড়িঘড়ি সিল করেছে৷ প্রয়োজনে ফরেন্সিক দল ডাকা হবে৷ আমরা তদন্তে কোনও খামতি রাখব না।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে হস্টেলের ঘরে অনামিকা অসুস্থ হয়ে পড়লে সহপাঠীরা প্রথমে তাঁকে বিশ্বভারতীর পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানেই সন্ধ্যায় চিকিৎসক ছাত্রীটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ অনামিকা বিষ খেয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হলেও পরিবার ও হস্টেল সূত্রে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে রহস্য ঘনিয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরেই টাকার প্রয়োজন পড়ছিল অনামিকার। কিছু দিন আগেই বোন অসুস্থ বলে ভবন থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তুলেছিলেন তিনি। দু’দিন আগে বাড়ি থেকেও প্রায় ৯০ হাজার টাকা আনান তিনি। কিন্তু এত টাকা তাঁর কোন কাজে লেগেছে, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর বোন দিব্যি সুস্থ বলেও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে এই টাকা তোলার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হস্টেলের আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।