• ওয়েট করো, মালুম চলেগা…, ছাত্রীর অপমৃত্যুতে হুমকি চ্যাট প্রকাশ্যে
    বর্তমান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: আপ ধমকি দে রহে হায়? উত্তর এসেছিল, ওয়েট করো মালুম চলেগা…। 

    বিশ্বভারতীর ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে এমনই হুমকির মেসেজ সামনে এল। ওই ছাত্রীর হোয়াটসঅ্যাপে সেই চ্যাট হাতে পেয়েছে শান্তিনিকেতন থানার তদন্তকারী অফিসাররা। তা হলে কি কেউ ব্ল্যাকমেল করছিল তাঁকে? সেই কারণেই কি তিনি আত্ম্যহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন? এমনই একাধিক প্রশ্ন মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে তদন্তের। 

    জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীর বোন গুরুতর দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। তাঁর অপারেশনের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। সাহায্য চেয়ে বন্ধু ও অধ্যাপকদের কাছে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পসদনের আত্মঘাতী ওই ছাত্রী অনামিকা সিং। অথচ, পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে,  এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। তাহলে কেন এত টাকার প্রয়োজন পড়েছিল অনামিকার? কেনই বা টাকা চেয়ে সহপাঠী ও অধ্যাপকদের মেসেজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই চাঞ্চল্যকর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের হদিশ পায় পুলিস। তাতে সন্দেহ হয়, অনামিকা নিশ্চয় কোনও অসাধু ব্যক্তির খপ্পরে পড়েছিলেন। তাঁকে ব্ল্যাকমেল করত। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি? তাঁকে খুঁজে বের করাই পুলিসের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ফলত, আর জি কাণ্ডের আবহে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে পুলিস। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ফরেন্সিক পরীক্ষার সুবিধা নেই। ওই ছাত্রীর দেহ এদিন ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যালে পাঠিয়েছে পুলিস। 

    পুলিস সূত্রে খবর, গত ৭ আগস্ট বন্ধু ও অধ্যাপকদের একটি সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপে অনামিকা লেখেন, ‘আমি স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমেস্টারের ছাত্রী। আমার বোনের গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেছে। অপারেশন করতে হবে। ৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। আমার পরিবার ইতিমধ্যেই চার লক্ষ ৩০ হাজার টাকা যোগাড় করতে পেরেছে। এখনও ৭০ হাজার টাকা প্রয়োজন। সাহায্যের জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।’ তাঁর আর্জিতে কাজ হয়। শিল্প সদনের কমবেশি সকলেই তাঁকে সাহায্য করেন। প্রায় ৭০ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে জমাও পড়ে। কিন্তু তারপর থেকেই অনামিকাকে খুব বেশি শিল্পসদনে দেখা যেত না। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি একা একা থাকছিলেন। এমনটাই তাঁর সহপাঠীরা জানিয়েছেন। 

    শান্তিনিকেতনের আম্রপালি হস্টেলে থাকতেন অনামিকা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর রুমমেটরা তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। তড়িঘড়ি ওয়ার্ডেনকে ডাকেন। হস্টেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওয়ার্ডেনকে অনামিকা বলেন, ‘বিষ খেয়েছি আমাকে বাঁচান।’ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ারসন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই রাতেই তিনি মারা যান। । শুক্রবার সকালে বোলপুরে অনামিকার বাবা, মা ও দাদা আসেন। ‌সেখানে সাংবাদিকদের মা প্রেমলতাদেবী বলেন, ‘কোনও কিছুর চাপে পড়েই মেয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা সত্য জানতে চাই।’

    অনামিকার এক সহপাঠী এদিন বলেন, ‘টাকা পাঠানোর পরও অনামিকা উৎকণ্ঠায় ছিল। জানতে চাইলে সে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জানায়, ‘আমার শরীর ঠিক নেই। এক ব্যক্তি লোনের জন্য মানসিক অত্যাচার করছেন। আমার কাছে টাকা কম। তারপরও আমাকে হুমকি দিচ্ছেন। কী করব কিছু বুঝতে পারছি না।’ এরপর অনামিকা অভিযুক্তের সঙ্গে সমস্ত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের কথোপকথন ওই বান্ধবীকে পাঠিয়ে দেন। সেখানে এক ব্যক্তি অনামিকাকে হুমকি দিয়ে লেখেন, ‘রুপিয়া অ্যারেঞ্জ কিজিয়ে। কেয়া হোনে বালা হ্যায়, মালুম চলেগা আপকো। অনামিকা পাল্টা লেখেন, ‘ক্যায়া করেঙ্গে আপ? ধমকি দে রহে হ্যায়? উত্তর আসে, ‘ওয়েট করো মালুম চলেগা…।’  এদিকে অধ্যাপক ও সহপাঠীদের দেওয়া টাকাও অনামিকার অ্যাকাউন্টে নেই। পরিবর্তে দু’টি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে পুলিস জানতে পেরেছে। সেই অ্যাকাউন্টগুলি কার? উত্তরগুলি পেলেই অনামিকার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
  • Link to this news (বর্তমান)