• বাবার স্বপ্নপূরণে প্রতিমা গড়েন এমএ পাশ চঞ্চল
    বর্তমান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বাবা চাইতেন ছেলে তাঁর চেয়েও বড় মৃৎশিল্পী হোক। এমন মূর্তি গড়ুক সে, যেন তাক লেগে যায় সবার। বাবার সেই স্বপ্নপূরণে ইংরেজিতে এমএ পাশ করেও চাকরিতে ঝোঁকেননি জলপাইগুড়ির চঞ্চল পাল। হাতে তুলে নিয়েছেন রং তুলি। তাঁর সেই তুলির টানেই চিন্ময়ী রূপ পায় মা দুর্গা।

    শহরের সেবাগ্রামের বাসিন্দা চঞ্চল একবেলা টিউশন পড়ান। অন্তত ৩০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে তাঁর। কিন্তু আর একবেলা প্রতিমা গড়েন। বাবা নরেন পাল জলপাইগুড়ির নামী প্রতিমা শিল্পী ছিলেন। শেষ বয়সে তিনি ছেলেকে শুধু মা দুর্গার রং আর চক্ষুদান শিখিয়ে যেতে পেরেছেন। ঠিক যখন প্রতিমার কাঠামো তৈরির পাঠ নেওয়া শুরু হবে, তখনই মারা যান বাবা। ফলে আজও চঞ্চলের কাছে অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে সেই শিক্ষা। কারিগর রয়েছেন। তাঁরাই প্রতিমার কাঠামো বানান। নিজেও কয়েকটা গড়েন বটে, কিন্তু মনপসন্দ হয় না তাঁর। তবে প্রতিমার গায়ে মাটি পড়তেই সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন চঞ্চল। বাবা যে বলে গিয়েছেন, যতই কারিগর থাকুক না কেন, দেবীর চোখ আঁকবে নিজে। প্রতিমার চোখেই লুকিয়ে থাকে শিল্পীর প্রতিভা।

    চঞ্চল যখন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়ছেন, তখনও কোনওদিন ফিরেও তাকাননি কুমোরটুলিতে। নিজের পড়াশোনা আর টিউশনি নিয়েই কাটত সময়। একদিন নরেনবাবু ডাকেন ছেলেকে। বাবা বলেন, ‘আমার সময় ফুরিয়ে আসছে। এবার তুমি হাল ধরো। মা দুর্গার এমন চোখ আঁকো, যেন সবাই অবাক হয়ে যায়। আমি চাই, তুমি অনেক বড় প্রতিমা শিল্পী হও।’

    বাবার কথা মনে ধরে চঞ্চলের। ঠিক করেন, চাকরির পিছনে ছুটবেন না। টিউশনি করে পেটের ভাত জোগাড় করবেন। আর বাবার স্বপ্নপূরণে গড়বেন প্রতিমা। সেই শুরু। ২০১৭ সালে মারা যান নরেন পাল। এখনও অনেকেই এসে তাঁর নামে মৃৎশিল্পালয় খোঁজেন। চঞ্চলের কথায়, বাবা একটা কথা বলতেন, প্রতিমার চোখই আসল। ওখানেই ঠিক হয়ে যায় কে, কত বড় শিল্পী। আজ যখন একের পর এক মা দুর্গার বায়না আসে, প্রতিমা রাখার জায়গা হয় না, তখন বারবার বাবার কথা মনে পড়ে। ভাবি, চাকরির পিছনে না ছুটে ভালোই করেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)