• ‘ছেলেটা সাদা হয়ে যাচ্ছে, একটু দেখুন’, ব্যর্থ আকুতি মায়ের, আর জি করে কর্মবিরতি, মৃত যুবক
    বর্তমান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রথমে জরুরি বিভাগ। শুনতে হল, ‘ডাক্তার নেই। অন্য কোথাও যান।’ শুরু হল অপেক্ষা। রোগীর। পরিবারেরও। একটা সময়ের পর অপেক্ষা বদলে গেল আর্তনাদে। প্রতিবাদের পীঠস্থান আর জি কর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ট্রলিতে শুয়ে রোগী। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ছেলের অবস্থা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন ২৭ বছরের তরুণের মা, বাংলার এক মেয়ে। চিত্কার করে বললেন, ‘ছেলেটা সাদা হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারবাবু কিছু করুন।’

    কর্মবিরতি চলছে। রাজ্যজুড়ে সরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বহু রোগীর। আজ সেই তালিকায় জুড়ল আরও একটা নাম। কান্নায় ভেঙে পড়ে মা কবিতা দাস বললেন, ‘ছটফট করতে করতে মারা গেল ছেলেটা। এটা কীরকম বিচার চাইছেন ডাক্তাররা!’ থানায় অভিযোগ জানাবেন? শূন্য চোখে মা বললেন, ‘ছেলেই তো আর নেই। অভিযোগ জানিয়ে কী হবে!’ শুধু পরিবারের সদস্যদের আর্জি, ‘আমরা যেভাবে সন্তানহারা হলাম, ভবিষ্যতে যেন আর কেউ না হয়। ডাক্তারদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা সহমত। কিন্তু পরিষেবা না পেয়ে মায়েরা যদি সন্তানহারা হন, সেটা কেমন আন্দোলন?’

    কোন্নগরে বিবেকনগরে দিদা ভগবতী মালাকারের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন পেশায় গাড়িচালক বিক্রম। এদিন ভোরে স্থানীয় ক্লাবের সামনে একটি ডাম্পার তাঁর দু’টি পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। পুলিস তাঁকে উদ্ধার করে শ্রীরামপুরের ওয়ালস হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রেফার করা হয় আর জি করে। বিক্রমের বাবা সুজিত দাস বলেন, ‘ন’টা নাগাদ আর জি করে পৌঁছই। প্রথমে জরুরি বিভাগে যাই। সেখানে বলে দেওয়া হয়, ডাক্তার নেই। অন্য কোথাও নিয়ে যান।’ কাঁদতে কাঁদতে দম্পতি বলেন, ‘ডাক্তারদের বলি, বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তখন একজন আউটডোরে টিকিট করতে বলেন। আমরা টিকিট করে অপেক্ষা করি। ছেলেটা সাদা হয়ে যাচ্ছিল। কেউ এসে পায়ে ব্যান্ডেজ করে। ওপিডিতেও বলা হয়, এর চিকিত্সা হবে না। এক্স রে করাতে গেলে ছেলেটা মারা যায়।’ চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন আর জি করের সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘চিকিত্সার গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়। ন’টার আগে উনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সাড়ে বারোটায় মারা যান। এর মাঝে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের টিম ওঁর চিকিত্সা করেছেন। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। ফিমার বোন দুটো ভেঙে গিয়েছিল, প্রচুর রক্তপাত হয়। মাথার আঘাত কতটা, জানার জন্য সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল। সেখান থেকে বেরনোর পর অবস্থার অবনতি হয়। আমরা চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলাম না।’ একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের মুখপাত্র অনিকেত মাহাতর গলাতেও। তারপরও থেকে গেল শোকস্তব্ধ বাবা-মায়ের কণ্ঠ—‘আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলছি, একটা দীর্ঘশ্বাস থেকে গেল।’
  • Link to this news (বর্তমান)