অর্ণব দাস, বারাকপুর: সোনার দোকানে ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে শুটআউট। দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে খুন হন দোকান মালিকেরস ছেলে। গত বছর বারাকপুর আনন্দপুরীতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হতেই তাদের হুমকির মুখে পড়লেন তদন্তকারী অফিসার ও সরকারি আইনজীবী! শুক্রবার বারাকপুর আদালতের লক আপ থেকে বেরিয়ে দুঁদে অপরাধীরা তাঁদের সরাসরি হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রায়দানে মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় এই দুঁদে ক্রিমিনালরা কোটের করিডরে এবং কোর্ট লকআপে হুমকি দিয়ে বলে, তারা বেরতে পারলে আমাকে এবং তদন্তকারী অফিসারকে খুন করবে। তখন সেখানে অনেকেই উপস্থিত ছিল। এনিয়ে অভিযোগও দায়ের হয়েছে।”
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপকদের নাম শফি খান, জামশেদ আনসারি, রাজবীর সিং, উত্তম কুমার উপাধ্যায় এবং আসিফ খান। তাদের প্রত্যেকেরই ৩৯৬ ধারায় ডাকাতি ও খুনের জন্য সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বারাকপুর আদালতের বিচারক। একইসঙ্গে ৩০৭ ধারায় শফি বাদে বাকি চারজনের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। পাঁচজনেরই মোট ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে এই রায়ে মোটেই খুশি হয়নি নিহত যুবকের বাবা নীলরতন সিংহ। তিনি জানিয়েছেন, “যাবজ্জীবনে আমি খুশি নই, একজনের অন্তত ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল।”
বারাকপুর আদালতের রায়ের বিরোধিতায় উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার আলোক রাজোরিয়া। তিনি বলেন, ”আসিফ খান আগের একটি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত আসামী। সে পালিয়ে গিয়েছিল। রাজবীর সিং বারাকপুরে এই ঘটনা ঘটনানোর পরে পাঞ্জাবেও একইরকম ঘটনা ঘটিয়েছিল। উত্তমের ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল যুবকের। তাই এই তিনজনের ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হোক আমরা চেয়েছিলাম। তাতে সমাজে একটা বার্তা যেত। রায় পড়ার পরে, সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে হাই কোর্টে আবেদন করা হবে।” এদিন রায়দানের পরে অপরাধীদের খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ হাই কোর্টে আবেদন করার সময় জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৪ মে বারাকপুরের জমজমাট এলাকা আনন্দপুরীর একটি সোনার দোকানে ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে গুলি চালিয়ে মালিকের ছেলে নীলাদ্রি সিংহকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। আহত হন দোকানের মালিক নীলরতন সিংহ-সহ আরেক কর্মী। ঘটনার তদন্তে নেমে ব্লুটুথ ডিভাইস দিয়ে মোবাইলের পেয়ার মিলিয়ে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মামলার চার্জগঠন হয় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর। মর্মান্তিক এই ঘটনার ১৫ মাসের মধ্যে ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ এবং ৩৮ জনের সাক্ষ্যর ভিত্তিতে গত অভিযুক্ত পাঁচজনকে দোষী সাব্যস্ত করে বারাকপুর আদালত। শুক্রবার তাদের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা ঘোষণা হয়।