এই সময়: বিপদ বাড়ল আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত আগেই শুরু করেছে সিবিআই। এ বার দোসর হলো ইডি! শুক্রবার সাতসকালে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসারেরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়ি থেকে শুরু করে ক্যানিংয়ের বাগানবাড়ি, চন্দননগরের শ্বশুরবাড়ি এবং এয়ারপোর্ট এলাকায় শ্যালিকার আবাসনে তল্লাশি চালিয়ে ব্যাগভর্তি নথি বাজেয়াপ্ত করে।একই সঙ্গে অভিযান চলে হাওড়ার সাঁকরাইলে সন্দীপ ঘনিষ্ঠ বিপ্লব সিংহ, কৌশিক কোলের বাড়িতেও। এদিনই সন্দীপের ঘনিষ্ঠবৃত্তে থাকা পেশায় ডিটিপি অপারেটার প্রসূন চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর সুভাষগ্রামের বাড়িতে প্রায় সাতঘণ্টা জেরার পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় ২ বিঘে জমির উপরে তৈরি সন্দীপের বাগানবাড়িতে।
'ভিলেন বানিয়ে দেবেন না'
সকাল ৬টা ৪০ মিনিট। সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার সুভাষ সরোবরে বাড়িতে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকেরা। ডাকাডাকি করার পরে প্রায় তিন ঘণ্টা তাঁদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। খবর পেয়ে ৯টা ৩০ মিনিটে স্ত্রী সঙ্গীতা ঘোষ এসে দরজা খুলে দেন। সঙ্গীতা বলেন, 'এই সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা তদন্তকারীদের সঙ্গে সব সময়ে সহযোগিতা করেছি। সময়ে সব প্রকাশ পাবে। কোনও কাগজপত্রে কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া যাবেও না। আপনারা (সংবাদমাধ্যম) এমন ভাবে সব দেখাচ্ছেন... তাই এত কিছু হচ্ছে।'
তিনি অনুরোধ করেন, 'কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়াই কাউকে এ ভাবে ভিলেন বানিয়ে দেবেন না।' একই সঙ্গে সন্দীপের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী স্বপন সাহার সল্টলেকের বাড়িতেও হানা দিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। ইডি সূত্রে খবর, ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সন্দীপের আর্থিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন তাঁরা।
তুরুপের তাস প্রসূন!
প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, পেশায় ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। ৯ অগস্ট ঘটনার দিন তাঁকে ক্রাইম সিনে দেখা গিয়েছিল। এ দিন সুভাষগ্রামে প্রসূনকে প্রায় ৭ ঘণ্টা জেরার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি লাগোয়া ক্যানিং ২ ব্লকের নারায়নপুরে সন্দীপ ঘোষের বিলাসবহুল বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। যার নাম 'সঙ্গীতা-সন্দীপ ভিলা'। বিকেল তিনটে নাগাদ প্রসূনকে নিয়ে ইডি-র তিনটি গাড়ি সন্দীপের বাংলোতে তল্লাশি চালাতে গেলে শয়ে শয়ে মহিলা-পুরুষ ওই বাংলোর সামনে হাজির হন।
মেন গেটে তাঁদের আটকে দেন সিআইএসএফ জওয়ানরা। প্রায় তিন ঘণ্টা তল্লাশি চালানোর পরে ইডির তদন্তকারীরা যখন প্রসূনকে নিয়ে বাংলো থেকে বাইরে এলে ঘিরে ধরেন সাধারণ মানুষ। গাড়ি থেকে প্রসূনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেন তাঁরা। এলাকার বাসিন্দারা স্লোগান দিতে থাকেন, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস।' বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে ইডি-র কনভয়। এদিন সকাল সাড়ে ছ'টা নাগাদ সুভাষগ্রাম হাসপাতালের সামনে প্রসূনের তিন তলা বাড়িতে হাজির হয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ তাঁকে আটক করে নিয়ে যান ইডির অফিসারেরা।
চিত্রশিল্পী থেকে সন্দীপ ঘনিষ্ঠ!
সন্দীপের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সুমন হাজরা এবং বিপ্লব সিংহ। শুক্রবার সকালে ইডির একটি দল 'মা তারা ট্রেডার্স' কোম্পানির মালিক বিপ্লব সিংহের সাঁকরাইল হাটগাছার বাড়িতে হানা দেয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, আগে বিপ্লব ছবি আঁকতেন। আট বছর আগে সাঁকরাইল বাসুদেবপুরের ওষুধ ব্যবসায়ী সুমন হাজরার সঙ্গে পরিচয়ের পরে তাঁর ভাগ্য বদলে যায়।
আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে পরিচয়ের পরে 'মা তারা ট্রেডার্স' নামে একটি কোম্পানি খোলেন বিপ্লব। ওই কোম্পানি আরজি কর হাসপাতাল সহ কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন চিকিৎসার সামগ্রী সরবরাহ করত। গত ৫ বছরে আমূল বদলে গিয়েছিল বিপ্লবের চালচলন। বাড়িতে কালীপুজোর দিন গোটা গ্রামের লোকেদের নেমন্তন্ন করে খাওয়াতেন তিনি। শুক্রবার বিপ্লবের পরিচিত কৌশিক কোলের বাসুদেবপুর দাসপাড়ার বাড়িতেও যায় ইডি। কৌশিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ।
ব্যাগভর্তি নথি উদ্ধার
এদিন হুগলির চন্দননগর ও বৈদ্যবাটিতেও তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। চন্দননগরের পাদ্রীপাড়ার বিবেকানন্দ সরণিতে সন্দীপের শ্বশুর বাড়িতে হঠাৎ হানা দেন তদন্তকারী অফিসারেরা। বাড়ি তালা বন্ধ থাকায় খালি হাতেই ফিরতে হয় ইডিকে। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত বিশ্বাস বলেন, 'চার পাঁচ বছর ধরে ফাঁকাই পড়ে রয়েছে বাড়িটি। সন্দীপের শ্বশুর রামকৃষ্ণ দাস কলকাতায় থাকেন।'
এরপর কলকাতা এয়ারপোর্টের ২ নম্বর গেট এলাকার মিলনপল্লীতে সন্দীপ ঘোষের শ্যালিকা অর্পিতা বেরার আবাসনে যায় ইডি। তিনি মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসক বলে জানা গিয়েছে। তাঁর স্বামী এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তল্লাশিতে প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। অন্যদিকে, চন্দননগরের পাদ্রীপাড়া থেকে বেরিয়ে বৈদ্যবাটির নার্সারি রোডের শঙ্কর পল্লিতে কুণাল রায় নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি।