আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য হয়েছে আগামী সোমবার। ন্যায় বিচারের দাবিতে তার আগের দিন অর্থাৎ রবিবার আবারও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে 'রাত দখল'-এর ডাক দিয়েছে নাগরিক সমাজ। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশও আরজি করের ঘটনায় দ্রুত বিচার চাইছে।জায়গায় জায়গায় প্রতিবাদের ঝাঁজও বাড়ছে। তার আগে ধর্ষণ-খুন মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হলো তৃণমূল। জোড়াফুলের তরফে শুক্রবার প্রশ্ন তোলা হলো- সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পরে ২৪ দিন, ৫৭৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও তদন্তকারী সংস্থা নিশ্চুপ কেন?
এ দিনই ধর্ষণ-খুনে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে ভার্চুয়ালি পেশ করা হয় শিয়ালদহ আদালতে। সেখানে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি প্রথমে হাজির না-হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারক, এমনকী সঞ্জয়কে জামিন দিয়ে দেবেন কি না, সে প্রশ্নও তোলেন। পরে অবশ্য সিবিআই কৌঁসুলি পৌঁছন এজলাসে। এই ঘটনার উল্লেখ করে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা সিবিআইয়ের তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন।
জোড়াফুল নেতৃত্বের অভিযোগ, ধর্ষণ-খুনে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয়কে ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশই। তার পরে নতুন করে আর একজনকেও সিবিআই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সিবিআইয়ের পেশাদারিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ তুলছেন অনেকে। এই আবহে এ দিনের ঘটনা আরও একবার সিবিআইয়ের অপদার্থতা প্রমাণ করল বলে সামগ্রিক ভাবে অভিযোগ তৃণমূলের।
জোড়াফুলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'আজ সিবিআইয়ের চরম গাফিলতি আমরা দেখলাম। আরজি কর মামলার মূল অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করা হলো, অথচ সিবিআইয়ের তরফে তখনও কেউ নেই! যা নিয়ে বিচারকও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।' রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ প্রসঙ্গে বলেন, 'আরজি করের ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ শুনানির দিন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা কোথায় ছিলেন?
তাদের আইনজীবীরাই বা কোথায় ছিলেন? বিজেপির প্রিয় সিবিআইয়ের এই ভূমিকা হলে তারা বিচার কী ভাবে দেবে?' তৃণমূল সাংসদ সায়নী ঘোষ এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, 'আরজি করের মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে সিবিআই তদন্তকারীরা ধৃত সঞ্জয় রায়ের পরে আদালতে পৌঁছচ্ছেন! এটা বিস্ময়কর। এই কাজ কলকাতা পুলিশ করলে বিজেপি কী বলত!'
অতীতে বহু মামলাতেই সিবিআইয়ের ভূমিকা প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে। আরজি করের ঘটনায় রাজ্যের বিরোধী দলগুলি সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করলেও শাসক দল তৃণমূল গোড়া থেকেই এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সির সাফল্যের হার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এসেছে। এ দিন শিয়ালদহ কোর্টে সিবিআইয়ের ঢিলেঢালা আচরণের অভিযোগ ওঠায় তৃণমূলের সুর আরও চড়েছে।
রাজ্যের শিশু ও নারীকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার কথায়, 'ওরা আরজি করের ঘটনার তদন্তভার নেওয়ার পর ২৪ দিন কেটে গিয়েছে। তদন্তে কোনও অগ্রগতি সামনে আসছে না। এর মধ্যে এ দিন শিয়ালদহ কোর্টে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা পৌঁছতেও দেরি করল। এর থেকেই স্পষ্ট বিচার দেওয়া ওদের লক্ষ্য নয়।'
সিবিআইয়ের এই গা-ছাড়া আচরণের পিছনে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে বলে মনে করছে রাজ্যের শাসকদল। তাদের বিশ্লেষণ, সিবিআই আরজি কর মামলার তদন্ত পরিকল্পিতভাবে ঝুলিয়ে রেখে বিজেপিকে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
তৃণমূলের মতো বিজেপিও ভুরু কোঁচকাচ্ছে সিবিআইয়ের কার্যকলাপ দেখে। কারণ, বিজেপি বিলক্ষণ জানেন, মানুষের ক্ষোভ সিবিআইয়ের দিকে ঘুরে গেলে রাজনৈতিক ভাবে সব থেকে বেশি ক্ষতি হবে তাদেরই। এ প্রসঙ্গে রাজ্যসভায় দলের সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'আমি সিবিআইয়ের মুখপাত্র নই। ফলে সিবিআইয়ের হয়ে জবাবদিহির দায় আমার নেই। তবে তদন্ত বিলম্বিত হওয়ার কারণে মানুষের আবেগে আঘাত লাগছে। তারপরেও মানুষের বিশ্বাস, নিরপেক্ষ তদন্ত কেউ করতে পারলে সিবিআই-ই পারবে।'