আরজি করে তাঁর প্রভাব নজর এড়ায়নি অনেকেরই। সেখানকার প্রায় সবাই বিশ্বাস করেন, সন্দীপ ঘোষের আর্থিক ঠিকুজিকুষ্ঠি তাঁর নখদর্পণে। কিন্তু সেই প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের আগের কর্মস্থল ন্যাশনালের কর্মী-আধিকারিকদের তাঁকে নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ, অনুযোগ ছিল না। সিবিআইয়ের হাতে ধৃত সন্দীপ ঘোষের দুর্নীতির তদন্তের সূত্রে ন্যাশনালের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এবং ২০১৮ থেকে সন্দীপের ছায়াসঙ্গী প্রসূনকে শুক্রবার ইডি আটক করায় আক্ষেপই করছেন তাঁর পুরোনো কর্মস্থলের লোকজন।ন্যাশনালের কর্মীরা বলছেন, সন্দীপের মতো ধূর্ত ও বদমেজাজি কখনও ছিলেন না সুভাষগ্রামের প্রসূন। বরং বুদ্ধিমান, ভদ্র, পরিশীলিত, কর্মদক্ষ বিশেষণই তাঁর জন্যে ব্যবহার করছেন তাঁর পুরোনো কর্মস্থলের লোকজন। তাঁদের আক্ষেপ, ২০১৮ থেকে সন্দীপের ছায়াসঙ্গী হওয়াই কাল হলো প্রসূনের! সময় পাল্টায়!
ন্যাশনালের নম্র প্রসূনকে নিজের ‘সুবিধা’র জন্যে সন্দীপ আরজি করে নিয়ে যাওয়ার পরেই প্রসূন বদলে যান বলে জানাচ্ছেন আরজি করের চিকিৎসক ও অ-চিকিৎসক কর্মী-আধিকারিকরা। ন্যাশনালের কর্মী হওয়ার পরেও ‘ডিটেলমেন্টে’ আরজি করে তিনি কাজ করেছেন দু’বছরের বেশি। হাসপাতাল সূত্রে দাবি, আরজি করে এসে নিজেকে সন্দীপের আপ্তসহায়ক (পিএ) বলে পরিচয় দিতেন। হয়ে ওঠেন উদ্ধত, দুর্বিনীত। গোটা কলেজে তাঁর প্রভাব ক্রমে হয়ে ওঠে সীমাহীন।
তাঁর পুরোনো কর্মস্থলের লোকজনের অনুমান, একটি ভালো ছেলে শুধুমাত্র সন্দীপের মতো প্রভাবশালীকে ‘না’ বলতে না-পেরে এবং তাঁর চাপ সইতে না পেরে, সন্দীপের অসৎ কাজে সঙ্গ দিয়ে নিজেও ভিলেন হয়ে গেলেন। ন্যাশনালের কর্মীরা মেলাতে পারছেন না সেই প্রসূনকে, যিনি ২০১৬-য় ‘রোগী সহায়ক’-এর চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে ন্যাশনালে যোগ দিয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ন্যাড়া মাথায় ইন্টারভিউ দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। দক্ষতার সঙ্গে রোগী সহায়কের কাজ করেছেন। কম্পিউটারের কাজেও ছিলেন তুখোড়।
২০১৮-য় সন্দীপ ন্যাশনালের উপাধ্যক্ষ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর নজরে আসেন প্রসূন। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। করোনাকালে স্বাস্থ্য দপ্তর ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করছিল। সে সময়েই, ২০২০-র নভেম্বরে প্রসূন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে যোগ দেন ন্যাশনালেই। অনেকেই মনে করেন, এই পোস্টিংয়ের নেপথ্যে রয়েছে সন্দীপের হাত।
এর পর ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে সন্দীপ আরজি করের অধ্যক্ষ হন। আর সন্দীপের অঙ্গুলিহেলনেই স্বাস্থ্য দপ্তর প্রসূনকে ২০২১-এর অগস্টে ন্যাশনাল থেকে ‘ডিটেলমেন্টে’ পাঠায় আরজি করে। অর্থাৎ, প্রসূন ন্যাশনালেরই কর্মী রইলেন, সেখান থেকেই বেতন পাবেন, কিন্তু কাজ করবেন আরজি করে।
ন্যাশনাল ও আরজি করের কর্মীরা জানাচ্ছেন, এর পরের ঘটনাক্রম চমকপ্রদ। ২০২২-এর অগস্টে ‘ডিটেলমেন্ট’-এর মেয়াদ ফুরোয় প্রসূনের। কিন্তু তত দিনে আরজি করে তাঁর প্রভাব ডালপালা মেলেছে। দেখা যায়, ২০২২-এর সেপ্টেম্বর থেকে প্রসূন সকাল ৯-৩০ নাগাদ পৌঁছে যেতেন ন্যাশনালে। সেখানে হাজিরা খাতায় সই করে টুকটাক কম্পিউটারের কাজ সেরে বেলার দিকে চলে আসতেন আরজি করে। সেখানে নিজেকে সন্দীপের ‘পিএ’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। এখন সেই প্রসূনের উপরেই সিবিআই এবং ইডির নজর ঘুরেছে। সন্দেহ, সন্দীপের সব দুর্নীতির সাক্ষী বছর পঁয়তাল্লিশের এই যুবক।