আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বিজেপির চাক্কা জ্যাম বা পথ অবরোধ কর্মসূচির জেরে এক গর্ভবতী মহিলার মৃত্যুর অভিযোগ। নদিয়ার ওই ঘটনার জেরে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই ঘটনায ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। তবে, ঘটনার দায় নিতে রাজি নয় বিজেপি। তারা পুলিশের উপর দায় চাপিয়েছে।আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে করে শুক্রবার নদিয়ায় 'চাক্কা জ্যাম' কর্মসূচির ডাক দেয় বিজেপি। অভিযোগ, বিজেপির কর্মসূচির জেরে হাসপাতালে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে যায় চার মাসের এক গর্ভবতী মহিলার। হাসপাতালে পৌঁছতে বিলম্বের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। মৃত দুর্গা শীল (২৩)-এর পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। যদিও গোটা ঘটনার দায় পুলিশ প্রশাসনের দিকে ঠেলেছে বিজেপি।
কী অভিযোগ উঠেছে?
কয়েক বছর আগে হীরা শীলের সঙ্গে বিয়ে হয় ফুলিয়ার প্রফুল্লনগরের বাসিন্দা দুর্গার। ফুলিয়ায় একটি সেলুন রয়েছে হীরার। দুর্গা মৃগী রোগী ছিলেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। চার মাসের গর্ভবতী দুর্গা রান্নার কাজ করতে গিয়ে বাড়িতে পড়ে যান। টোটোয় করে তড়িঘড়ি স্ত্রীকে ফুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান হীরা। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রোগীকে রেফার করা হয় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। অ্যাম্বুলান্স ভাড়া করে রওনা দেন হীরা ও পরিবারের লোকজন।
সেই সময়ই ফুলিয়া-রানাঘাটের মাঝে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে বিজেপি চাক্কা জ্যাম কর্মসূচি চলছিল। আরজি করের ঘটনায় সুবিচার চেয়ে অবরোধ করা হয় জাতীয় সড়ক। দুর্গার স্বামী হীরার অভিযোগ, তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্স যেতে দেওয়ার জন্য অনেকবার অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু তাঁর আবেদন কেউ শোনেননি। পরে পুলিশের নজরে বিষয়টি এলে অন্য রাস্তা দিয়ে তাঁদের ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু হাসপাতালেই মৃত্যু হয় দুর্গার।
হীরা বলেন, 'চিকিৎসকরা বললেন কয়েক মিনিট আগে এলেও হয়তো স্ত্রীকে বাঁচানো যেত। অবরোধের জন্য সময়ে পৌঁছতে পারিনি। বড় ক্ষতি হয়ে গেল।' বিজেপির কর্মসূচির দিকে অভিযোগের আঙুল তাঁর। গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া তাঁর পরিবারে।
এ দিকে এই নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে উঠেছে। শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজ কিশোর গোস্বামী জানান, যে কোনও রাজনৈতিক দল আন্দোলন করতেই পারেন। তবে অ্যাম্বুল্যান্সকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। তৃণমূল কংগ্রেস মৃতার পরিবারের পাশে থাকবে।
অন্যদিকে, রানাঘাট দক্ষিণ সাংগঠনিক বিজেপির মুখপাত্র সোমনাথ কর পুলিশকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এই ঘটনার দায় পুলিশের। আন্দোলনকারীরা সব অ্যাম্বুল্যান্সকে যেতে দিয়েছে। দূরে যদি কোনও অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে থাকে সেক্ষেত্রে দলীয় কর্মীদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।'
এই বিষয় নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লালটু হালদার অবশ্য জানান, এখনও পর্যন্ত পরিবারের তরফ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে কিনা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে পুলিশের তরফে। প্রয়োজনে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করবে পুলিশ।