• গ্রেপ্তার হন, হস্টেল থেকে ঘাড় ধাক্কাও জোটে বিরূপাক্ষের
    এই সময় | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, বর্ধমান ও কামারহাটি: বৃহস্পতিবারই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করেছে স্বাস্থ্যভবন। তার পরেই অতীতে একাধিক অপরাধমূলক কাজে তাঁর জড়িয়ে পড়ার ঘটনা সামনে আসতে শুরু করেছে। সেই সব ঘটনায় কখনও তাঁকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল, আবার কখনও তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছিল হস্টেল থেকে।বিরূপাক্ষ ডাক্তারি পাশ করেন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে। সেখানেও তাঁর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই সব অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে শুক্রবার দাবি করলেন কামারহাটি সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রার্থপ্রতিম প্রধান। এ দিন তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে আমি এই কলেজে এসে শুনেছিলাম বিরূপাক্ষ বিশ্বাস কলেজ হস্টেলের দু’টি রুম বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছে। আমি থানায় ওই বছরের ১৮ জুলাই অভিযোগ করার পরে পুলিশ ওকে গ্রেপ্তার করেছিল।’

    সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) দেখা গিয়েছে হস্টেল রুমে ঢুকে পুলিশ মারতে মারতে বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ জিপে তাঁকে তোলার সময়ে কয়েকজন চিকিৎসক পড়ুয়া হাততালি দিয়ে উল্লাস করছে। অধ্যক্ষ বলেন, ‘সন্দীপ ঘোষের ডান হাত বলে পরিচিত বিরূপাক্ষ বিশ্বাস এই কলেজেরই ছাত্র। আমি এখানে আসার পরে খুব একটা সুবিধে করতে পারেনি। তবে চোরাগোপ্তা থ্রেট কালচার চালিয়ে গিয়েছে।’

    যোগ করেন, ‘টুকলি ধরলে অধ্যাপকদের হুমকি, হেনস্থা ও রাস্তায় মারধরের হুঁশিয়ারি দেওয়া, হাসপাতালের কর্মীদের হুমকি ও ঘেরাও করা হতো। অভিযোগ ছিল বলেই স্বাস্থ্য দপ্তর বিরূপাক্ষর সঙ্গে অভীক দে-কেও সাসপেন্ড করেছে। আশাকরি স্বাস্থ্য দপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’

    বিরূপাক্ষর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলগুলোতেও। বছর তিনেক আগে এখানেও পিজিটি হস্টেলে থাকাকালীন মারপিটের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। হস্টেলের এক পিজিটি স্টুডেন্টকে তিনি মারধর করলে হস্টেল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন আবাসিকরা। সে বিষয়ে তদন্ত চলাকালীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিয়োলজি বিভাগের প্রধান মৃণালকান্তি ঘোষকে জামার কলার ধরে মারতেও যান তিনি।

    হস্টেল সুপারের দায়িত্বে থাকা স্বর্ণমুকুল সাহা বলেন, ‘মৃণালকান্তি স্যারকে অপমান করার পরে আমি ওকে হস্টেল থেকে বের করে দিই। এমনিতেই হস্টেলে থাকত খুবই কম। গাড়িতে নীলবাতি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াত। এক জন পিজিটি হিসেবে কী ভাবে তা পারত সেটা ভেবে আমরাও অবাক হতাম।’

    সূত্রের খবর, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলগুলোয় আবাসিকদের কোনও পরিচয়পত্র নেই। ফলে সেখানে অবাধে ঢুকে পড়তেন বিরূপাক্ষর অনুগামীরা। আরজি করের ঘটনার পরে হস্টেলগুলোয় নতুন করে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। বিষয়টি এত দিনে নজরে এসেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের। এ বার হস্টেলগুলোয় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছেন কর্তৃপক্ষ।

    বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে মোট ৭টি হস্টেল রয়েছে। তার মধ্যে দু’টি লেডিস হস্টেল, চারটি বয়েজ হস্টেল ও একটি পিজিটি পড়ুয়াদের হস্টেল। সব কটি হস্টেলের আবাসিকদের নতুন করে বোর্ডার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

    তিনি বলেন, ‘এতে দুটো বিষয় হবে। এক জন ছাত্র তার জন্য নির্দিষ্ট করা হস্টেলেই থাকবে। হস্টেলে ঢোকার সময়ে রেজিস্টারে তার পরিচয়পত্র মিলিয়ে দেখা হবে। নিশ্চিত হওয়া যাবে সে একই ব্যক্তি কিনা। এই কারণেই আমরা হস্টেলের প্রত্যেক পড়ুয়াকে নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’ এ প্রসঙ্গে বিরূপাক্ষর প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোনে রিং বেজে যায়। উত্তর দেননি মেসেজেরও।
  • Link to this news (এই সময়)