এই সময়, কালনা: ‘আরজি করের নির্যাতিতার বিচার চেয়ে চাক্কা জ্যাম চলছে। আপনি প্রেগনেন্ট তো কী হয়েছে! গাড়ি যেতে দেবো না।’শুক্রবার ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে বিজেপির বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এমনই শাসানি শুনতে হয় এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে। আতঙ্কে ওই মহিলা গাড়ির কাচ তুলতে গেলে তাতে জুতো ছুড়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। করা হয় গালিগালাজও। শুক্রবার নাদনঘাটের বিদ্যানগর মোড় এলাকার এই ঘটনায় বিক্ষোভে আটকে পড়া গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি চালককে মারধরের অভিযোগও উঠেছে।
নাদনঘাট থানায় বিজেপির পাঁচ নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন গাড়ির চালক সঞ্জীব ভদ্র। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। যদিও বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথের দাবি, ‘ওই গাড়ির চালক আমাকে মারতে এলে দলের নেতাকর্মীরা রুখে দাঁড়িয়েছেন। কেউ গালিগালাজ, মারধর বা গাড়ি ভাঙচুর করেননি।’
জানা গিয়েছে, আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবিতে এ দিন দুপুরে নাদনঘাটের বিদ্যানগর মোড়ে চাক্কা জ্যাম কর্মসূচি চালায় বিজেপি। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতা রাজীব ভৌমিক ও জেলা সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ। সেই বিক্ষোভে এ দিন গাড়ি নিয়ে আটকে পড়েন সঞ্জীব।
তিনি বলেন, ‘এসটিকেকে রোড ধরে কালনা থেকে পূর্বস্থলীর দিকে যাচ্ছিলাম। গাড়ির পিছনের সিটে ছিলেন গাড়ি মালিকের অন্তঃসত্ত্বা বোন। তাঁর ব্যাপারে জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করতেই তারা আমাদের গালিগালাজ করতে থাকে। প্রতিবাদ করলে আমাকে ওরা চড়, ঘুসি মারে। গাড়িও ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ আসে। তার পর কোনওরকমে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে বাঁচি। বিজেপি নেতা রাজীব ভৌমিক, চিন্ময় দেবনাথ, প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ, প্রতিমা মণ্ডল ও বিধান ঘোষের নামে নাদনঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’
কালনার এসডিপিও রাকেশ চৌধুরি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ এ দিকে, ঘটনার পর বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে গেলেও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলা।
তিনি বলেন, ‘কালনায় চিকিৎসককে দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। অবরোধে আটকে পড়লে বিক্ষোভকারীদের জানাই যে আমি প্রেগনেন্ট। ওদের মধ্যে একজন ছুটে এসে বলে, প্রেগনেন্ট তো কী হয়েছে! যেতে দেবো না। গালিগালাজ করলে জানলার কাচ তুলে দিই। তখন কাচের উপরেই জুতো দিয়ে মারে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা প্রাণকৃষ্ণ বলেন, ‘কর্মসূচি সময়ে হলুদ রংয়ের গাড়িটি আসে। চালক বলেন, ভিতরে গর্ভবতী মহিলা রয়েছেন। আমি বলি, এতে অসুবিধার কী আছে। এমন অনেক গর্ভবতী মহিলা হয়তো এখন আটকে রয়েছেন। একটু দাঁড়ান। আমাদের কর্মসূচি এখনই শেষ হয়ে যাবে। তখন ওই গাড়ির চালক আমাকে মারতে এলে কর্মী-সমর্থকরা রুখে দাঁড়ান। প্রতিবাদ করে ও বচসা হয়। গাড়ির বনেটে কেউ থাপ্পড় মেরে থাকতে পারে। কিন্তু গাড়ির চালককে কেউ মারেনি। গাড়ির কাচ আগে থেকেই ভাঙা ছিল। কেউ গাড়ির কাচ ভাঙেনি।’