• তৃণমূলে ‘নারদ-নারদ’! কুণালের খোঁচা দেবকে, গেল পাল্টা উত্তর, চলছে মন্তব্যের তির ছোড়াছুড়ি
    আনন্দবাজার | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ডায়ালিসিস যন্ত্রের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে তর্কে জড়ালেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এবং স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেব। সমাজমাধ্যমে একে অন্যের উদ্দেশে একের পর এক খোঁচা দিলেন তাঁরা। কুণাল সমাজমাধ্যমে দাবি করলেন, ঘাটাল হাসপাতালে ওই ডায়ালিসিস যন্ত্রের উদ্বোধন আগেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন উদ্বোধক হিসাবে তাঁর নাম পরিবর্তন করে সাংসদ দেবের নাম বসানো হয়েছে। নিজের দাবির সপক্ষে একটি ছবিও পোস্ট করেন তিনি। এর পরেই সমাজমাধ্যমে খোলা চিঠি দিয়ে দেব তাঁকে তথ্য যাচাই করে মন্তব্য করার পরামর্শ দেন। কুণাল যদিও থামেননি। দলের ‘কুৎসাকারীদের সঙ্গে আদিখ্যেতা’ করার জন্য দলীয় সাংসদকে কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেতা কুণাল।

    গত বুধবার ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নতুন একটি ডায়ালিসিস যন্ত্রের উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন দেব। সেই বিষয়েই সমাজমাধ্যমে দেবকে খোঁচা দেন কুণাল। সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, গত ১২ মার্চ ভার্চুয়াল মাধ্যমে ঘাটালের ওই হাসপাতালে ডায়লিসিস ইউনিটের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৪ সেপ্টেম্বর ওই একই ইউনিটের উদ্বোধন করেন সাংসদ দেব। দু’টি ছবি পোস্ট করে কুণাল দাবি করেন, উদ্বোধক হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী নাম বদলে সাংসদের নাম করা হল। কুণালের খোঁচা, ‘‘সুপারস্টার একেই বলে। এলাকার মানুষ তো অবাক! অভিনন্দন দেব।’’

    দেব এর পরেই সমাজমাধ্যমে খোলা চিঠি দেন কুণালকে। তিনি লেখেন, ‘‘আমি দিদিকে অনুরোধ করেছিলাম ঘাটাল হাসপাতালে ডায়লিসিস এবং সিটি স্ক্যান যন্ত্রের জন্য। সেটা দিদি মার্চ মাসে ভার্চুয়ালি ঘোষণা করেন।’’ দেব জানান, গত সপ্তাহে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তিনি যন্ত্রগুলির উদ্বোধন করেন, যাতে সাধারণ মানুষ জানতে পারে। তাঁর দাবি, এর ফলে কোনও ‘মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ, সুপারস্টার বা মুখপাত্র’ নন, সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। কুণালকে খোঁচা দিয়ে তিনি লেখেন, ‘‘ধন্যবাদ তোমাকে, তোমার মাধ্যমে এই পরিষেবার কথা আরও অনেকের কাছে পৌঁছে গেল।’’ নিজের পোস্টে তথ্য যাচাই না করে সংবাদমাধ্যমে পোস্ট না করার ‘পরামর্শ’ও দেন দেব। মনে করিয়ে দেন বর্তমান পরিস্থিতির কথা। তিনি লেখেন, ‘‘শেষে একটাই কথা বলব, আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাতে তথ্য যাচাই না করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য না করাই ভাল।’’ সাধারণ মানুষকে ঘাটাল হাসপাতালের এই পরিষেবা নিয়ে সচেতনও করেন সাংসদ।

    দেব পরিস্থিতির কথা মনে করাতেই কুণাল পাল্টা তাঁর বিরুদ্ধে দলের ‘কুৎসাকারী’দের সঙ্গে ‘আদিখ্যেতা’ করার অভিযোগ তোলেন। তিনি লেখেন, ‘‘চলতি পরিস্থিতির কথা যদি বলো, আমরা সৈনিকেরা বিষপান করেও লড়ছি, অপ্রিয় হচ্ছি। যারা দল, সরকারকে গালমন্দ করছে, পেশা ও সৌজন্যের নামে তাঁদের সঙ্গে আদিখ্যেতা করি না।’’ তিনি এ-ও জানান, ছবি থেকেই স্পষ্ট যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যন্ত্রের উদ্বোধন করেছিলেন মমতা। আর উদ্বোধন দু’বার হয় না।

    প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের আবহে রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ডায়ালিসিস যন্ত্রের উদ্বোধনে গিয়ে দেবও মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আরজি কর নিয়ে যে প্রতিবাদ চলছে, তাকে সমর্থনও করেন তিনি। দেবের কথায়, ‘‘আরজি করে যা হয়েছে খুবই দুঃখজনক, নিন্দনীয়। তার প্রতিবাদ করাই উচিত। সাধারণ মানুষ সেই আবেগ থেকেই পথে নেমেছে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আর কারও সঙ্গে যেন এমন না হয়। ধর্ষকেরা এই অপরাধ করার আগে যেন ভয় পায়। এটা তো শুধু বাংলা বা অন্য কোনও রাজ্যের বিষয় নয়, এটা সারা দেশের বিষয়। ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’ বা ‘বেটি বচাও বেটি পঢ়াও’-এর কোনও মানেই নেই, যদি দেশের মেয়েদের আমরা রক্ষা করতে না পারি।’’ মনে করা হচ্ছে, এই নিয়ে দেবকে কটাক্ষ করেছেন কুণাল। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমরা শ্রমজীবী সৈনিকেরা বিষপান করে লড়াই করে অপ্রিয় হচ্ছি। তুমি চৈতন্যদেব সাজছ।’’ পেশা, সৌজন্যের খাতিরে দেব এই ‘আদিখ্যেতা’ করছেন বলেও দাবি করেছেন কুণাল। এর পর দেব সমাজমাধ্যমে গণেশের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘‘ভগবান আমাদের সবাইকে সদ্বুদ্ধি দিন।’’ তার পাল্টা কুণালের কটাক্ষ, ‘‘ভগবান সব দু’মুখো সুবিধাবাদীর মুখোশ খুলে দিক।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)