অভিরূপ দাস: পরিবেশের সংকট কাটাতে বাতিল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করবে ওয়েবেল। কলকাতা পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যৌথভাবে তারা ক্যাম্প করবে শহরের পাড়ায়-পাড়ায়। শনিবার প্রথম বিক্রেতা হিসেবে ওয়েবেলের কাছে বাতিল কম্পিউটার-মনিটর, কি বোর্ড বিক্রি করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বিক্রি করলে টাকা পাওয়া যাবে?
ওয়েবেল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় কুমার দাস জানিয়েছেন, “বিনা পয়সায় নয়। যে যা বাতিল দ্রব্য বিক্রি করবেন তার বদলে টাকা পাবেন। ওয়েবেল তার দাম নির্ধারণ করেছে।” ফেলে দেওয়া এই সব ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি প্রক্রিয়াকরণের জন্য সোনারপুর আইটি পার্কে তৈরি হচ্ছে প্লান্ট। ফেলে দেওয়া যন্ত্রপাতিকে রিসাইকেল করে নতুন যন্ত্র তৈরি হবে ওই প্লান্টে। সূত্রের খবর, প্লান্টে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
সূত্রের খবর, ফি বছর দেড় লক্ষ মেট্রিক টন ই-ওয়েস্ট তৈরি হচ্ছে বাংলায়। কেন বাড়ছে এত? নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিত্য নতুন গ্যাজেট কিনছে আমবাঙালি। পুরনো মোবাইল, টিভি, ইস্ত্রি, ওয়াশিং মেশিন পড়ে থাকছে বাড়িতেই। রাজ্য়ের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছেন, সব বাড়িতেই খুঁজলে গুচ্ছের বাতিল বাল্ব পাওয়া যাবে। যা আজ কাজে লাগছে না। তা কোনওদিনই লাগবে না। জমিয়ে না রেখে এগুলো বিক্রি করে দিন।
এই ধরণের বাতিল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি লোহালক্কড়ে সঙ্গে বিক্রি করে দেন অনেকেই। সেখানেই বিপদ। বাতিল রেডিও, টিভি, মাইক্রোওয়েভ, ইনভার্টারে তামা, অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, রুপো, প্যালাডিয়াম, প্লাটিনাম, নিকেল, টিন, লেড (দস্তা), লোহা, সালফার, ফসফরাস, আর্সেনিকের মতো উপাদান থাকে। পরিবেশবিজ্ঞানী ডা. স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “পরিবেশে এগুলো মিশলে প্রভূত ক্ষতি। এই সমস্ত ই-বর্জ্র্যে থাকা একাধিক উপাদানের কারণে চোখ, ত্বক, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাতালে এগুলো পোড়ালে শ্বাসকষ্ট, ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু ই বর্জ্র্যে ক্যাডমিয়ামের ক্যাডমিয়ামের মতো ধাতু থাকে যা ফুসফুসের ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের সমস্যা তৈরি করে।
তা ঠেকাতেই শনিবার কলকাতা পুরসভা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যৌথভাবে শুরু করল ই-বর্জ্য সংগ্রহ। ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম ক্যাম্প হবে এক এবং ন’ নম্বর বরোয়। ধীরে ধীরে গোটা কলকাতাতেই হবে ক্যাম্প। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সচিব ডা. রাজেশ কুমার এদিন বলেছেন, বঙ্গে প্রতি বছর দেড় লক্ষ মেট্রিক টন ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার মেট্রিক টনকে প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা আছে। বাকিটুকু সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। সেই অভাব মেটাতেই এবার এই পাড়ায় পাড়ায় বাতিল মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি সংগ্রহের ক্যাম্প। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, সকলে যাতে জানতে পারেন পাড়ায় পাড়ায় প্রচার চালাবেন কাউন্সিলররা।
বিক্রির টাকা দেওয়া হবে অনলাইনে। সঙ্গে করে আনতে হবে আধার কার্ড। যাঁদের স্মার্টফোন নেই তাঁদের ব্যাঙ্ক ডিটেইল নিয়ে আসতে হবে ক্যাম্পে। সেখান থেকে টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবেন ওয়েবেল এর আধিকারিকরা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পুর কমিশনার ধবল জৈন, বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার, মেয়র পারিষদ অসীম বসু, সন্দীপন সাহা।