• পুরুলিয়ার নিস্তারিণী কলেজের  অভিযুক্ত অধ্যাপককে সাসপেন্ড
    বর্তমান | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: নিস্তারিণী কলেজে যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত অধ্যাপককে বহিষ্কারের দাবিতে পথে নামলেন পড়ুয়ারা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে কলেজের গেটে বিক্ষোভ দেখানো হয়। কলেজের সামনের জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে অবরোধ চলে। অভিযুক্ত শিক্ষককে কলেজ থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি এই ঘটনা সম্পর্কে যে অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছেন কলেজের অধ্যক্ষা, তারজন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও আওয়াজ তোলা হয়। অধ্যক্ষা নিজের মন্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার করার পরই অবরোধ ওঠে। পাশাপাশি ওই অধ্যাপককে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলেও জানান অধ্যক্ষা।

    প্রসঙ্গত, প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার নিস্তারিণী কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক বিকাশ দত্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। অধ্যাপকের কাছে টিউশনি পড়তেন ওই ছাত্রী। তবে তাঁর শারীরিক সমস্যা থাকার কারণে দীর্ঘদিন আসতে পারেননি। ওই ছাত্রী যেহেতু অন্যদের থেকে পিছিয়ে গিয়েছেন তাই তাঁকে ‘এক্সট্রা’ ক্লাস করানোর নাম করে বুধবার নিজের বাড়িতে ডাকেন অধ্যাপক। সেখানেই ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনা প্রসঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষকের হয়েই সাফাই দিতে শোনা যায় কলেজের অধ্যক্ষা ইন্দ্রাণী দেবকে। সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘অধ্যাপকের ক্লিন ইমেজ রয়েছে। আমার ধারণা তদন্তে বেকসুর খালাস হয়ে যাবেন।’ এতেই যেন ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। শুক্রবার এনিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা হয় পড়ুয়াদের। যদিও তাতে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় শনিবার পথ অবরোধে শামিল হন পড়ুয়ারা। 

    কলেজের ছাত্রী দিশা চট্টোপাধ্যায় বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ নিজে একজন মহিলা হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে এরকম অসংবেদনশীল মন্তব্য করতে পারেন? অধ্যক্ষাকে রাস্তায় এসে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি তোলা হয় আন্দোলনকারীদের তরফে। এদিকে অবরোধের জেরে দেশবন্ধু রোডে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় টাউন থানার আইসি। তিনি পড়ুয়াদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি জানান, শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়ার পর ওই রাতের মধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা করেছে। আইনিভাবে যা যা করার, পুলিস তাই করেছে। যদিও পড়ুয়ারা সাফ জানিয়ে দেন, অধ্যক্ষা যে মন্তব্য করেছেন তার জন্য তাঁকে পড়ুয়াদের কাছে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। তবেই আন্দোলন উঠবে। অবশেষে অধ্যক্ষা এসে পড়ুয়াদের সঙ্গে এসে দেখা করেন। নিজের বলা মন্তব্য ফিরিয়ে নেন তিনি। 

    অধ্যক্ষা বলেন, আমি ওই মন্তব্য অতর্কিতে করেছি। এটা কখনই সঠিক কথা হতে পারে না। আদালত বেকসুর খালাস করবে, আমি করার কেউ নয়। আমি নিজেও অভিযুক্তের চরম থেকে চরমতম শাস্তি চাই। সেইসঙ্গে অধ্যক্ষা জানান, আমরা এই ঘটনায় মর্মাহত। এনিয়ে একটা তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। গভর্নিং বডির মিটিং ডেকে অভিযুক্ত অধ্যাপককে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। এরপরই আন্দোলন তুলে নেন পড়ুয়ারা। কলেজ পড়ুয়া শুভ্রা মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতা চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, আন্দোলনের জেরে আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে। তবে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। যতদিন না মেয়েদের সঙ্গে এধরনের ঘটনা ঘটা বন্ধ হচ্ছে ততদিন এই প্রতিবাদ চলবে। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)