নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি করে নৃশংস ধর্ষণ-খুনে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় গ্রেপ্তার হয়েছিল ১০ আগস্ট। এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হয় ১২ তারিখ। ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে গ্রেপ্তার থমকে গিয়েছে ওইদিনই। একই দশা কি হয়েছে তদন্তেরও? অগ্রগতি হচ্ছে বলে সিবিআই দাবি করলেও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে রাজ্যের সাধারণ মানুষ। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান আর জি কর চত্বর ছাড়িয়ে পৌঁছে যাচ্ছে সিবিআইয়ের সিজিও কমপ্লেক্সেও। আর তাই প্রতিদিন ‘উঠে আসছে’ নিত্যনতুন তত্ত্ব এবং অঙ্ক। কখনও শোনা যাচ্ছে, সঞ্জয় ধর্ষণ করলেও খুন করেনি। কখনও আবার প্রশ্ন উঠছে ঘটনাস্থল নিয়ে। একটি থিওরিতে আবার দাবি করা হচ্ছে, একজনের পক্ষে এভাবে অভয়াকে খুন করা সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই আরও কেউ ছিল। অর্থাৎ, রোগপরীক্ষা চলছে লাগাতার। অথচ, রোগটা কী—জানা যাচ্ছে না। কোনও দাবির পক্ষেই সিবিআইয়ের তরফে কিছু ‘নিশ্চিত’ করা হচ্ছে না। ঘটনার মোটিভ নিয়ে তারা নাকি এখনও অন্ধকারে। কারণ, লালবাজার প্রাথমিক তদন্তে যা জানিয়েছিল, সেই মোটিভকে ‘অতি সরলীকরণ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা। কলকাতা পুলিস জানিয়েছিল, ‘হিট অব দ্য মোমেন্টে’ প্রবৃত্তির শিকার হয়ে ধর্ষণ করেছিল সঞ্জয়। তারপর ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে খুন করে। আর এখানেই থমকে রয়েছে সিবিআই। এর মাঝে মামলার নথি নিতে চেয়ে শিয়ালদহ আদালতে কলকাতা পুলিস আবেদন করায় বিতর্ক বেড়েছে। সিবিআই প্রশ্ন তুলেছে, তদন্তভার তো ওদের হাতে নেই। তাহলে কেন এই আবেদন?
আগামী কাল, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি। তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট দিতে হবে সিবিআইকে। এর আগে নতুন অঙ্ক কী? এজেন্সি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধর্ষণ-খুনের আড়ালে এখনও খোঁজ চলছে ‘পরিকল্পনা’র। তাদের দাবি, এই প্ল্যান হয়েছে মাস দুয়েক আগে। এক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রাক্তন এক কর্তার ভূমিকা তাদের সন্দেহের তালিকায়। হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মী ও ডাক্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআইয়ের ইঙ্গিত পেয়েছে, ওই কর্তার সঙ্গে তরুণীর মতপার্থক্য হয়েছিল। বোঝানোর চেষ্টা সত্ত্বেও বেঁকেই বসেছিলেন তরুণী। একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে তাঁকে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তারপরও ওই তরুণী দমে যাননি। তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহ, তাহলে কি কোনও দুর্নীতির হদিশ পেয়েছিলেন অভয়া? প্ল্যান করেই ৮ তারিখ নাইট ডিউটি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে? শিডিউলে ওই তারিখের পর অভয়ার কোনও নাইট ডিউটি না থাকায় সন্দেহ বাড়ছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে চাওয়া হয়েছে। ৮ আগস্টের আগে শেষ কবে অভয়া নাইট ডিউটিতে ছিলেন, সেটাও জানতে চেয়েছে সিবিআই।
তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা, সঞ্জয়ের ‘চরিত্রের দোষ’ নতুন নয়! তাহলে পুরনো রেকর্ডে তার উল্লেখ নেই কেন? কোনও অভিযোগই বা কেন হয়নি? সিবিআই এখনও মনে করছে, তাকে কেউ ‘কাজে লাগিয়েছে’। অর্থাৎ, অন্য কেউ জড়িত। তার প্রমাণ কি হাতে এসেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সির? তাহলে নিশ্চয়ই সেই উল্লেখ থাকবে সিবিআইয়ের স্টেটাস রিপোর্টে? আরও কেউ গ্রেপ্তার হবে? কিন্তু কবে? আপাতত লালবাজারের খুঁত খুঁজছে তারা। আর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে আম জনতার।