শুধু আরজি করের ঘটনাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষকে হেনস্থা, ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, এমন নানা অভিযোগে সিভিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এ বার সেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের শৃঙ্খলার মধ্যে বাঁধতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করছে রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশ।আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ৪৫ দিনের এই বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু হবে। সিভিকদের নানা অনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে বিতর্ক এড়াতে সরকারের এই উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই প্রশিক্ষণ শিবিরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব সামলানো, কাজের সময়ে কী ভাবে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে তার পদ্ধতি শেখানো হবে, এরই পাশাপাশি হাতেকলমে বোঝানো হবে, তাঁদের ঠিক কী করা উচিত এবং কোনটা উচিত নয়।
এই মুহূর্তে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশে এক লক্ষেরও বেশি সিভিক ভলান্টিয়ার এবং গ্রামীণ পুলিশ রয়েছেন। আইনমাফিক এরা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সে যুক্ত নন। তাই এদের হাতে লাঠি পর্যন্ত দেওয়া হয় না। অথচ সাধারণ মানুষের মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সম্পর্কে তেমন কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। যেমন, আরজি করের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় সব জায়গাতেই নিজেকে পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিয়ে বেআইনি সুযোগ সুবিধা নিত।
নবান্ন সূত্রের খবর, সিভিকদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সে বিষয়ে একটা মডেলও তৈরি করা হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই জেলা স্তরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, এক সময়ে রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগ দেওয়ার পরে প্রার্থীদের ৪২ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল। পরবর্তীকালে তা তিন মাসে কমিয়ে আনা হলেও পরে আবার তা ৮ মাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে স্বামী বিবেকানন্দ পুলিশ অ্যাকাডেমি, শালুয়া, রায়গঞ্জ ও বাঁকুড়ায় এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
সেখানে পরীক্ষার ধাপ পেরোতে পারলে তবে ব্যাটেলিয়নে পাঠানো হয় পুলিশ কর্মীদের। পরবর্তীকালে প্রয়োজন মতো থানায় বদলি করা হয় তাঁদের। অন্যদিকে, কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে বা এসআই থেকে ইনস্পেক্টর পদে পদোন্নতির সময়েও বাধ্যতামূলকভাবে পুলিশ কর্মীদের নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য এরকম কোনও প্রশিক্ষণের সুযোগ কখনও ছিল না।
২০১৩ সাল থেকে রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ শুরু হয়। সে সময়ে বলা হয়েছিল, আগ্নেয়াস্ত্র তো নয়ই, এমনকী তাঁদের হাতে লাঠিও দেওয়া যাবে না। কারণ, পুলিশের রির্জাভ ফোর্সের আওতায় না থাকায় এদের দিয়ে শুধুমাত্র ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করানো হবে। সেজন্য জয়েন করার পরে থানাস্তরে মাত্র ১৫ দিনের জন্য ছোটখাটো বিষয়ে প্রশিক্ষণের পরে কাজে নামিয়ে দেওয়া হতো এদের।
সরকারি সূত্রের খবর, এতদিন পর্যন্ত সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের ক্ষেত্রে তেমন কোনও নিয়ম ছিল না। ফলে তাঁদের পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতিও ছিল না। যদিও সাধারণ পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা বেশ কড়া। আরজি করের ঘটনার পর থেকে সরকারের লক্ষ্য, এ বার সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই রকম ভাবে কড়াকড়ি ব্যবস্থা চালু করা।