• জমায়েতের জায়গা নাম বদলে তিলোত্তমা চত্বর
    এই সময় | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • উত্তরপাড়া স্টেশন এলাকা থেকে টোটোয় চেপেছিলেন সমরেশ বাগ। সমরেশ, তাঁর মেয়ে এবং স্ত্রী মিলে রাত দখলের কর্মসূচিতে যাবেন। টোটো-চালককে সমরেশের মেয়ে অনুত্তমা বলেন, ‘তিলোত্তমা চত্বর যাব।’ টোটো-চালক কয়েক সেকেন্ডের জন্যে থমকান। তার পর নিজেই বলেন, ‘ও... গৌরী বাসস্ট্যান্ড তো... বসুন।’ সমরেশ-অনুত্তমার মতো উত্তরপাড়ার বহু মানুষই এখন গৌরী বাসস্ট্যান্ডকে ডাকছেন ‘তিলোত্তমা চত্বর’ নামেই।উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বহু মানুষের কাছেও তাঁদের এলাকার চৌরঙ্গি মোড় এখন তিলোত্তমা চত্বর। বারাসতের ডাকবাংলো মোড়কেও বহু মানুষ চিহ্নিত করছেন ওই নামে। একই নাম পেয়েছে মেদিনীপুর শহরের কলেজ সংলগ্ন এলাকা, রায়গঞ্জের ঘড়িমোড়, ব্যারাকপুর স্টেশন, সোদপুরের এইচবি টাউন, ইছাপুরের স্টোরবাজার, লেক টাউনের ঘড়িমোড়...তালিকা ক্রমে লম্বা হচ্ছে।

    উত্তরপাড়া বা অশোকনগরের মতো কোথাও কোথাও ‘তিলোত্তমা চত্বর’ নামটা এত জনপ্রিয় হয়েছে যে এখন এই নাম বললেই ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছেন মানুষজন। আরজি কর হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনার পর এক মাস ধরে রাজপথের দখল নিয়েছে প্রতিবাদী জনতা। জমায়েত, রাত দখল, দিন বদলানোর ডাক...কর্মসূচি অবিরাম।

    সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ধর্ষিতার নাম-পরিচয় সামনে আনা যায় না। তাই দিল্লির সেই মেয়েটিকে যেমন গোটা দেশ নির্ভয়া নামে চেনে, তেমনই আরজি করের তরুণী-চিকিৎসককে কেউ ডাকছেন তিলোত্তমা নামে, কেউ অভয়া, কেউ কেউ আবার অপরাজিতা নাম দিয়েছেন। প্রতিবাদের জায়গাগুলোকেও প্রতিবাদীরা তিলোত্তমা চত্বর হিসেবে চিহ্নিত করছেন। কর্মবিরতিতে থাকা জুনিয়র ডাক্তাররা যে টেলি-মেডিসিন পরিষেবা চালাচ্ছেন, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অভয়া ক্লিনিক’।

    কী ভাবে এই নামকরণ ঘটে গেল?

    উত্তরপাড়ার বাসিন্দা কলেজ-পড়ুয়া সঙ্ঘমিত্রা দাসের কথায়, ‘এটা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। তিলোত্তমার বিচারের জন্যেই তো লড়াই। তাই তাঁর নামে একটা জায়গার নাম আমরাই দিয়েছি। সেটাই মানুষের মুখে মুখে ফিরছে।’ অশোকনগরের প্রতিবাদী তৃণাঙ্কা পোদ্দার মনে করতে পারছেন না তাঁদের এলাকার চৌরঙ্গি মোড় কী ভাবে তিলোত্তমা চত্বর পরিচিতি পেল।

    তৃণাঙ্কার বক্তব্য, ‘১৪ অগস্ট রাত দখলের পর থেকেই প্রায় প্রতিদিন ওই চৌরঙ্গি মোড়ে কোনও না কোনও কর্মসূচি চলছে। ওই এলাকাটাকে প্রতিবাদের এপিসেন্টারই বলা চলে। শুধু সাধারণ মানুষের প্রতিবাদই নয়, রাজনৈতিক দলগুলিও চৌরঙ্গি মোড়কে বেছে নিয়েছে তাদের কর্মসূচির জন্যে। আর এ ভাবেই মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে তিলোত্তমা চত্বর নাম।’

    রাত দখলের প্রথম ডাক যাঁর, সমাজতত্ত্বের ছাত্রী-গবেষক সেই রিমঝিম সিনহা বিষয়টিকে স্বাগতই জানাচ্ছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘আসলে নানা ভাবে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আমাদের নজরে পড়ছে। তাতে নানা ফর্ম তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ভাবেই গণআন্দোলন হয়ে এসেছে। তিলোত্তমা চত্বর আসলে সেই প্রতিবাদকেই স্বীকৃতি দেয়।’

    রিমঝিম মনে করেন, মানুষের স্মৃতি খুব দুর্বল। তাই স্মৃতিতে স্থায়ী ভাবে কিছু ধরে রাখতে তিলোত্তমা চত্বরের মতো জায়গার নামকরণ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। কলকাতাতে এখনও সে ভাবে কোনও এলাকা চিহ্নিত করা না-হলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনুষ্ণা দাসের বক্তব্য, ‘মনে রাখতে হবে, কলকাতার আর এক নাম তো তিলোত্তমাই।’
  • Link to this news (এই সময়)