এই সময়, কলকাতা ও হুগলি: তিনি মা। তিনিও চান ছেলের মৃত্যুর বিচার। আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সন্তানকে হারিয়েছেন কোন্নগরের বাসিন্দা কবিতা দাস। গত ৯ অগস্ট তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে আরজি কর হাসপাতালের পরিষেবা মিলছে না বলে দাবি রোগীর পরিবারের একাংশের। তাঁদের মধ্যেই একজন কবিতা।অভিযোগ, শুক্রবার ওই হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর ছেলে বিক্রম ভট্টাচার্য(২২)-এর। সন্তান হারানো কবিতার আক্ষেপ, ‘একজন মা হিসেবে আমিও তরুণী চিকিৎসকের খুনের বিচার চাই। কিন্তু চিকিৎসা না পেয়ে আমার ছেলে যে মারা গেল, সেই ডাক্তারদের বিচার কে করবে? সাধারণ মানুষ কী দোষ করেছেন?’
কোন্নগরের যুবক বিক্রম লরি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন। শুক্রবার প্রথমে তাঁকে শ্রীরামপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছিল। এর পর জরুরি বিভাগ এবং আউটডোরের মধ্যে ছোটাছুটি করলেও ঠিক সময়ে চিকিৎসকদের দেখা মেলেনি বলে পরিবারের অভিযোগ।
সন্তানহারা মায়ের প্রশ্ন, ‘এটা কি প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে? চিকিৎসা না পেয়ে রোগী মারা যাবে? কার কাছে বিচার চাইব?’ শনিবার কোন্নগরের বাড়িতে বসে সে দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানান কবিতা। ওই দিন আউটডোরে গিয়ে প্রথমে টিকিট করেন তিনি। চেম্বারের বন্ধ দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরে এক জন ম্যাডাম বেরিয়ে এসে তাঁকে বলেন, ‘ডাক্তার নেই। অপেক্ষা করতে হবে।’
কবিতার কথায়, ‘ছেলের পা দিয়ে ততক্ষণে রক্তপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রায় এক-দেড় ঘণ্টা পরে আউটডোরে ডাক্তার আসেন। সেলাই এবং ব্যান্ডেজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’
কবিতার অভিযোগ, ‘দু’জন চিকিৎসক এসে শুধু ব্যান্ডেজ করে ছেড়ে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ছেলের হার্টফেল করে।’ মৃতের দিদিমা রেখা মালাকার বলেন, ‘সারাদিন আমি ও আমার মেয়ে হাসপাতালে ছুটেছি। নাতিটার চিকিৎসা হলো না। অকালেই চলে গেল। একটা মেয়ের কথা ভাবা হচ্ছে। আমাদের কথা কেউ ভাববে না। এটা কি ঠিক?’
যদিও আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, ‘শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ওই যুবককে ভর্তি করানো হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পাশাপাশি পায়ের এক্স-রে, মাথার সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল। চিকিৎসায় বিক্রম সে ভাবে সাড়া দিচ্ছিলেন না।’ অন্যদিকে, বিক্রমের মা জানিয়েছেন, ছেলের সিটি স্ক্যান করানোই হয়নি। এক্স-রে করাতে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন অসাড় হয়ে আসে ওর শরীর।
এদিন মৃতের বাড়িতে যান শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আরজি করে নিয়ে যাওয়ার পরে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা কেউ সাহায্য করতে আসেনি। মা আর দিদিমা দু’জনেই বয়স্ক। তাঁরাই রোগীকে এক জায়গা থেকে ঠেলে ঠেলে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন।’ সাংসদের দাবি, ‘যদি জাস্টিস ফর আরজি কর হয়, তাহলে কেন জাস্টিস ফর কোন্নগর হবে না?’
অন্য দিকে, এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুতে ডাক্তারদের একাংশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের লোকজন। হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা রাজীব দেবের (৩৩) ২০১৪ সালে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। তারপর মাঝেমধ্যেই তাঁকে হাসপাতালে যেতে হতো। এ বছরের ২ অগস্ট কিডনির সমস্যা নিয়ে রাজীব ভর্তি হন এসএকেএমে। ৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতালেই মারা যান রাজীব। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসকদের গাফিলতিতেই রাজীবের মৃত্যু হয়েছে।