১৯৭৫ সালের আইএএস ব্যাচ জহর সরকার দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে প্রসার ভারতীর সিইও-পদে কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও সামলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূত্রে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি গভীর চিন্তার ও উদ্যোগের পরিচয় দিয়ে এসেছেন। সবসময় পিছিয়ে-থাকা পিছিয়ে-পড়া বর্গের দিক থেকে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে দেখে এসেছেন। সেইমতোই লেখালিখি করেছেন ও সময়বিশেষ বিভিন্ন ফোরামে নিজের বক্তব্যও রেখেছেন বিভিন্ন সময়ে।
এহেন লেখক-চিন্তক জহর মূলত 'পাবলিক ইনটেলেকচুয়াল' পরিচয়ে পরিচিত হলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তিনি নিজের মতো এগিয়ে চলতে চাইছিলেন হয়তো। ফলে রাজনীতিতে যোগ দেন। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জহর সরকার ২০২১ সালে রাজ্যসভার সাংসদও মনোনীত হন। ইউপিএ সরকারের আমলেই বিভিন্ন সরকারি দফতরের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। তাই বিজেপি-আমল শুরু হতেই নিজের টার্ম শেষ হওয়ার আগেই অবসরগ্রহণ করেন জহর। বিজেপির সঙ্গে কাজ করতে অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন বলে মনে হয়েছিল তাঁর। সেই তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তখনই তা বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে অনেকেরই ভ্রু-উত্তোলনের কারণ ঘটিয়েছিল।
এহেন জহর সরকার কেন এখন সরে যেতে চাইছেন?
জহর সরকার জানিয়েছেন তিনি ইতিমধ্য়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, তিনি রাজ্যসভার সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দেবেন। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, আরজি কর নিয়ে তিনি খুবই মর্মাহত। জানিয়েছেন, কয়েকজন নেতার ও আমলার দাপট আর তার সূত্রে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ নিয়ে তিনি খুবই অস্বস্তিতে। একটি দুপাতার চিঠিতে তিনি দুর্নীতির কথাও লিখেছেন। তবে বিভিন্ন কারণের মধ্যে মূলত আরজি কর কাণ্ডের কথাই তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আর রাজনীতিতেই থাকতে চান না, তা-ও জানিয়েছেন। তিনি কেন রাজ্যসভার সাংসদপদ ছাড়ছেন, তার যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, তেমনই তিনি যে রাজনীতিতেও থাকতে চান না, ব্যাখ্য়া করেছেন তার কারণও।
ইতিমধ্যে এ নিয়েও আক্রমণের মুখে জহর সরকার। জহরবাবুর মমতাকে চিঠি লেখা ও তাঁর বক্তব্যের কারণে তিনি তৃণমূলের কোনও কোনও নেতার কাছে সমালোচিতও হচ্ছেন। যেমন দেবাংশু ভট্টাচার্য। তিনি জহর সরকারের নাম না নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেছেন। তবে যার বক্তব্য জহর সরকারের দিকেই যেন আঙুল তুলছে, বলে মনে করছে কোনও কোনও মহল। জহর সরকারের এই ইস্তফা কি তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াল? অবশ্যই, মনে করছে রাজনৈতিক মহলেরই একাংশ।