বেলগাছিয়ার বাসিন্দা। বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। সন্দীপ ঘোষ আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ হওয়ার পরই তাঁর বডিগার্ড হিসেব নিয়োগ হন শেখ আফসার আলি। অভিযোগ, কয়েক মাসের মধ্যেই হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ে নাক গলাতে শুরু করেন তিনি।তাঁর বিরুদ্ধে উঠে আসতে থাকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। শুধু তাঁর ঘনিষ্ঠদেরই পার্কিং লট, খাবারের স্টল, সুলভ শৌচালয়ের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও, আফসারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি আরজি কর কর্তৃপক্ষ।
মেডিক্যাল সরঞ্জাম, বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্টের বেআইনি আর্থিক লেনদেনেও তাঁর নাম ওঠে। কিন্তু, কোনও কিছুতেই আফসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টে সন্দীপের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
আরজি করের দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ এবং আফসারের এই আঁতাঁতের বিষয়ে গোরু পাচার মামলার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছে সিবিআই। তাঁরা মনে করছেন, বীরভূমের অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগল হোসেনের মতোই আফসারকে শিখণ্ডী করে আখের গুছিয়েছেন সন্দীপ। দু’জনের যোগসাজশে ঠিক কত কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে--- এ বার তার হিসেব কষতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।
দু’জনকেই দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে এ বিষয়ে। সিবিআই সূত্রে খবর, দুর্নীতির বিষয়ে সন্দীপ বিশেষ কিছু বলতে না চাইলেও, আফসারের বয়ান এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
তদন্তকারীদের দাবি, স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার সঙ্গে আফসারের যোগাযোগ ছিল। এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সন্দীপের নজরে চলে আসে আফসার। সাক্ষাতে সন্দীপ প্রথমেই বুঝে যান, আফসারকে নিজের সঙ্গে রাখলে আখেরে তাঁরই লাভ হবে। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, অধ্যক্ষদের নিরাপত্তায় সিকিউরিটি গার্ডের বন্দোবস্ত থাকে। কিন্তু, সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কোনও অধ্যক্ষ ব্যক্তিগত বডিগার্ড পান না। যদিও সন্দীপের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যভবনের কোনও নিয়মই যে কাজ করত না, তা প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই জানতেন।
সন্দীপের ব্যক্তিগত বডিগার্ড হিসেবে হাসপাতাল চত্বরে দাপট ছিল আফসারের। সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আফসারের মুখের উপরে কেউ ‘না’ বলার ক্ষমতা রাখতেন না। উল্টে, তাঁকে খুশি করতে পারলেই মেডিক্যাল সরঞ্জাম সাপ্লাই থেকে ব্যবসা, সব কিছুরই সুবিধা হতো। সন্দীপ যেখানে যেতেন তার আগে থেকেই আফসার সেখানে পৌঁছে যেতেন। সেখানে কারা আছেন, কেন আছেন, তার কৈফিয়েত চাইতেন। অভিযোগ, চিকিৎসকদেরও রেয়াত করতেন না। হাসপাতালের ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীরাও তাঁকে সমঝে চলতেন।
সূত্রের খবর, আরজি করের প্রশাসনিক ভবনের সামনে একটি ‘ক্যাফেটেরিয়া’ আফসারের স্ত্রীর নামে রয়েছে। অভিযোগ, টেন্ডার দুর্নীতি করেই সেই ক্যাফে শুরু হয়। ই-টেন্ডার এড়াতে সন্দীপের কথামতো বিভিন্ন কাজে ১ লক্ষ টাকার কম বাজেট করারও অভিযোগ উঠেছে। যা আফসার ঘনিষ্ঠরাই পেতেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। আফসারের ভাইও আরজি কর হাসপাতালে বেআইনি ভাবে দু’চাকার পার্কিংলট চালাতেন বলে অভিযোগ।
সূত্রের খবর, ধৃত ভেন্ডার বিপ্লব সিংহ এবং সুমন হাজরাকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন আফসারই। মেডিক্যাল সরঞ্জাম কেনাবেচার বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে আফসার খতিয়ে দেখতেন বলে অভিযোগ। বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্টের দুর্নীতির সঙ্গেও আফসার জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। নিজের স্ত্রীর ক্যাফেই নয়, বয়েজ় মেন হস্টেল এবং লেডিস হস্টেলের ক্যান্টিন থেকেও টাকা ঢুকত আফসারের পকেটে।
নিয়মের তোয়াক্কা না করেই হাসপাতালের ভিতরে থাকা সুলভ শৌচালয়ের টেন্ডারেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্তকারী অফিসারেরা জানতে পেরেছেন, আরজি কর হাসপাতালের সঙ্গে কোনও সংস্থার চুক্তি হলেও, সেই নিয়ম মানা হতো না। ‘টেন্ডার’ ডাকা হতো হাতে লিখে।