• দুর্গাপুজোয় কলকাতা, মুম্বই থেকে বরাত, খুশি নতুনগ্রামের কাঠপুতুলের শিল্পীরা
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল দিয়ে এবছর সেজে উঠবে কলকাতা ও মুম্বইয়ের পুজো মণ্ডপ। নতুনগ্রামের শিল্পীদের এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। পুজো মণ্ডপের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা বরাত পেয়ে খুশি শিল্পীরা। 

    পূর্বস্থলী-২ ব্লকের পিলা অঞ্চলের নতুনগ্রাম বহুবছর ধরেই কাঠপুতুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। গ্রামের ৫০টি পরিবার পূর্বপুরুষের আমল থেকে বংশ পরম্পরায় কাঠের পেঁচা তৈরির শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। এখানকার শিল্পীদের তৈরি কাঠের রাজা-রানি, গৌর-নিতাই, লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা বিখ্যাত। এই শিল্পই তাঁদের জীবিকা। বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বই সহ নানা জায়গায় এখানকার শিল্পকর্ম এখন পাড়ি দেয়। কাঠপুতুল তৈরি করে গ্রামের অর্থনৈতিক হাল ফিরেছে। আগে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের কাঠের পুতুল পাড়ি দিয়েছে বিদেশের মাটিতেও। শিল্পীদের তৈরি কাঠের রাশিয়ান ডল স্পেনের মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে। শুধু তাই নয়, আফ্রিকান ডলের আদলে কাঠের দুর্গাপ্রতিমা স্থান পেয়েছে রাজ্যের বিশ্ববাংলার বিপনন কেন্দ্রগুলিতে। এবার পুজোতেও কলকাতা, মুম্বইতে মণ্ডপ সাজানোর জন্য পূর্বস্থলীর নতুগ্রামে কাঠপুতুল শিল্পীদের বরাত দেওয়া হয়েছে৷ 

    কলকাতায় মণ্ডপজুড়ে থাকছে কাঠের ‘ঘোড়ার পিঠে সেপাই’ পুতুল, দারোয়ান ও সৈন্য সামন্ত। এমনকী চার ফুটের কাঠের দুর্গাপ্রতিমাও স্থান পাবে কলকাতার মণ্ডপে। তাই দিনরাত এক করে এখন কাঠের সেপাই তৈরি করছেন শিল্পী অমল ভাস্কর। তিনি এবার প্রায় দু’ থেকে তিন লক্ষ টাকার বরাত পেয়েছেন। অমলবাবু বলেন, দু’-তিন ফুটের ঘোড়া সেপাই তৈরি করেছি। দারোয়ান এসব দিয়েই সাজিয়ে তোলা হবে পুজো মণ্ডপ। খুব ভালো লাগছে যে আমার তৈরি কাঠের নানা কাজ মণ্ডপে স্থান পাবে। পাশাপাশি আরেক শিল্পী গৌতম ভাস্করের কাঠের ‘রাজা-রানি’ পুতুল পাড়ি দিচ্ছে মুম্বইয়ে। দু’-তিন ফুটের রাজা-রানি পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের ঐতিহ্য। তার সঙ্গে এখানকার পেঁচাও মুম্বইয়ের পুজো মণ্ডপে স্থান পাচ্ছে। শিল্পী গৌতম ভাস্কর বলেন, কাঠের রাজা-রানি, পেঁচা বলতে নতুনগ্রামকেই বোঝায়। এটাই আমরা বংশ পরম্পরায় করে আসছি। সেই রাজা-রানি দিয়েই মণ্ডপের থিম ফুটিয়ে তোলা হবে। পুজোর জন্য বরাত পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগছে। আগে নতুনগ্রামের শিল্পীরা শুধু কাঠের পেঁচা, রাজা-রানি পুতুলেই সীমাবদ্ধ থাকতেন। এখন তাঁরা এসব ছেড়ে ঘর সাজানোর জন্য নানা কাঠের সুদৃশ্য জিনিসপত্র, আসবাবপত্র তৈরি করছেন। তাতেও পেঁচার ছোঁয়া থাকছে। ঘর সাজানোর জন্য ছোট ছোট পেঁচার চেন, পেঁচা দিয়ে ঘড়ি, আসাবাবপত্র তৈরি করছেন তাঁরা।  শিল্পীরা কাঠের নানা সূক্ষ্ম কারুকার্যয় ভরা ফার্নিচার তৈরি করছেন। ড্রেসিং টেবিল, সোফা, ডাইনিং টেবিল, বসার চেয়ারের সেট এমনকী পুরনো আমলের সিন্দুক পর্যন্ত তৈরি করছেন। প্রতিটি ফার্নিচারেই কাঠপুতুল ব্যবহার করা হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)