• টাকার বিনিময়ে পোস্টিংয়ের বন্দোবস্ত, অভিযোগ দায়ের হলেও বিরূপাক্ষে নীরবই থানা
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: জুনিয়র ডাক্তারকে হুমকি দেওয়া বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের একটি অডিও কয়েকদিন আগে ভাইরাল হয়। ওই অডিওর প্রায় শেষলগ্নে বিতর্কিত ওই চিকিৎসককে বলতে শোনা যায়, ‘আমার নামে যদি অভিযোগ ঠুকতে হয় তাহলে নামটা লিখে নে। আমার নাম বিরূপাক্ষ বিশ্বাস।’ যদিও ভাইরাল হওয়া অডিওর কণ্ঠস্বর তাঁর বলে অবশ্য মানতে রাজি ছিলেন না ওই চিকিৎসক। তাঁর দাবি, এআইয়ের মাধ্যমে তাঁর গলা নকল করা হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, ওই কণ্ঠস্বর তাঁরই। তাঁর নামে যতই অভিযোগ হোক না কেন কেউ কিছু করতে পারবে না, সেই আত্মবিশ্বাস বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের ছিল। ২০২৩ সালে বদলি করিয়ে দেওয়ার নামে এক চিকিৎসকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু টাকা নেওয়ার পরও বদলি হয়নি। ওই চিকিৎসক অ্যান্টি কোরাপশন বিভাগে অভিযোগ করেন। বর্ধমান থানাতেও অভিযোগ হয়। কিন্তু পুলিসও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। যদিও এক পুলিস আধিকারিক বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে কেস করা হয়েছিল। আইএমএর বেঙ্গল শাখার যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, কে কোথায় পোস্টিং পাবেন, সেটা অভীক দে এবং বিরূপাক্ষরা ঠিক করতেন। নিজেদের লবিতে থাকা উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকদের বর্ধমান সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালে পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। আবার অপছন্দের তালিকায় থাকা চিকিৎসকদের উত্তরবঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে সিন্ডিকেটে না থাকলে তাঁরা হস্তক্ষেপ করতেন না। বিরূপাক্ষ বিশ্বাস কয়েকদিন আগে ফোনে বলেন, এসব মিথ্যা অভিযোগ। পরিকল্পনমাফিক বদনাম করা হচ্ছে। 

    মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে নিয়োগ হওয়া অনেক চিকিৎসকও জার্সি বদলে উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেটে চলে আসেন। সেই তালিকায় চিকিৎসক ছাড়াও বিএমওএইচ সহ অন্যান্য আধিকারিকরা রয়েছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন একই জায়গায় পোস্টিং রয়েছেন। আন্দোলনকারী চিকিৎসক গৌরাঙ্গ প্রামাণিক বলেন, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের গেস্টহাউসে বসেই সবকিছু ঠিক হতো। রাত পর্যন্ত সেখানে এই সিন্ডিকেটের লোকজন থাকতেন। কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন বলে মনে হলে তাঁরা পদক্ষেপ নিতেন। 

    আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বলেন, তাঁদের দাবি মিথ্যা নয়। সেটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই কলেজ কর্তৃপক্ষ জানতে পারবে। মাঝেমধ্যে এখানে বাইরের লোকজনকেও দেখা যেত। কিন্তু বিরূপাক্ষ এবং অভীকের দাপটে কেউই মুখ খোলার সাহস দেখাতেন না। বিরূপাক্ষকে প্রায়ই নীলবাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরতে দেখা যেত। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। করোনার পর থেকে বিরূপাক্ষের দাপট বেড়ে যায়। তিনি মেডিক্যাল কলেজে ঢুকলেই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হতো। এক বছর আগে তিনি কাকদ্বীপে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে রিলিজ দেওয়া হয়নি। খাতায় কলমে তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পোস্টিং ছিলেন। কিন্তু ডিউটি না করে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে ঘুরে বেড়াতেন বলে অভিযোগ। যদিও অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারে তিনি প্রতিদিনই উপস্থিত থাকতেন। সেটা কীভাবে হতো তা নিয়েও রহস্য দানা বেঁধেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)