সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: অনেকেরই ইচ্ছে থাকে জীবনে পছন্দমতো কিছু একটা করতে। কিন্তু, সামাজিক পারিবারিক চাপে অনেক সময়ই হয়ে ওঠে না। এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই রাজেন তেপথীতে কোচবিহার বাণীতীর্থ ক্লাব এবার তাদের পুজোর থিম করেছে ‘উড়তে মোদের মানা’। পুজোর এবছর প্ল্যাটিনাম জুবিলি বর্ষ। মণ্ডপসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে মাস চারেক আগেই। হাজারেরও বেশি পাখির মডেল দিয়ে কলকাতার শিল্পী মণ্ডপ বানাচ্ছেন। কলকাতার কুমোরটুলির প্রতিমা, চন্দননগরের আলোকসজ্জায় মণ্ডপ চত্বর সাজিয়ে তোলা হবে। বাজেট ৮০ লক্ষ টাকা। ৬ অক্টোবর পুজোর উদ্বোধন হবে।
পুজো কমিটির সহ সভাপতি আশুতোষ পাল বলেন, ৭৫ বছর আগে পুজোটি স্থানীয় রামকৃষ্ণ আশ্রমে শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই পুজোই আমরা চালিয়ে আসছি। এবার থিম ‘উড়তে মোদের মানা’। প্ল্যাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে এবছর বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্রজয়ন্তী সহ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ড, বৃক্ষরোপণ প্রভৃতি কাজ সারা বছর ধরে হয়ে আসছে।
পুজো কমিটির সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় বলেন, মানুষ যাতে বদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পায় তারজন্যই এমন থিম। থিমে মানুষের অবস্থা পাখির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। খাঁচায়বন্দি পাখি, উন্মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখির মডেল প্রভৃতির মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।
মানুষের জীবনে নানা আশাআকাঙ্খা থাকে। জীবনের স্বপ্ন, উচ্চাশা থাকে। কিন্তু নানা ঘাত প্রতিঘাত, সামাজিক চাপে সেই স্বপ্ন অনেক সময় পূরণ হয় হয়। জীবনের উদার আকাশে দেওয়া হয় না উড়াল। সেই সময় মানুষের অবস্থাটাও যেন খাঁচায় বন্দি পাখির মতোই হয়ে যায়। আবার অনেক সময় দীর্ঘদিন খাঁচায় বন্দি পাখিকে ছেড়ে দিলেও সে উড়ে যাতে পারে না। মানুষও তেমনই স্বপ্নভঙ্গ হলে আর সেই আগের ইচ্ছের জায়গায় ফিরে যেতে পারে না। এসব বিষয়কেই পাখির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। কলকাতার শিল্পী অমল পাঁজা মণ্ডপসজ্জার কাজ করছেন। ৩০ ফুট উঁচু মণ্ডপটি লোহার কাঠামো, খড়, বাঁশ, বেত, তালপাতা, হোগলাপাতা, পাটের দড়ি, মাটির কলসি প্রভৃতি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। থাকবে এক হাজারের বেশি পাখির মডেল। হাজার খানেক মাটির হাঁড়ি। মণ্ডপ সংলগ্ন স্থায়ী মণ্ডপে হবে সাবেকি দুর্গা প্রতিমায় পুজো। থিমের প্রতিমার উচ্চতা ১০ ফুট। বানাচ্ছেন মৃৎশিল্পী সুরজিৎ পাল। চন্দননগরের রণজিৎ দাস আলোকসজ্জার দায়িত্বে আছেন। -নিজস্ব চিত্র।