• চিনা মাঞ্জায় জখম স্কুটারআরোহী, দেখেও মুখ ফেরালেন ৩ ডাক্তার,  মা উড়ালপুলে পুলিসের উদ্যোগে বাঁচল প্রাণ
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে চলছিল স্কুটার। আচমকাই চালকের গলায় জড়িয়ে যায় ধারালো চীনা মাঞ্জা। পিছনের আসনে ছিলেন চালকের স্ত্রী। তাঁর গলাতেও মাঞ্জা জড়িয়ে যায়। আতঙ্কে তড়িঘড়ি স্কুটারের গতি কমাতেই বিপত্তি। পিছন থেকে একটি বাইক এসে ধাক্কা মারে তরুণীর পায়ে। ছিটকে পড়েন তিনি। ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার ট্রমায় প্রায় অবচেতন অবস্থা ৩১ বছর বয়সি ওই তরুণীর। ‘ডক্টর’ লেখা গাড়ি দাঁড় করিয়ে সাহায্য চান আহতের স্বামী। একবার নয়, আহতকে দেখেও পর পর তিনটি চিকিৎসকের গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে যায় নানা অজুহাতে। তবে শেষমেশ অফ ডিউটিতে থাকা কলকাতার পুলিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার এক অফিসারের তৎপরতায় রক্ষা পেলেন তরুণী। 

    শনিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ মা ফ্লাইওভারের উপর দুর্ঘটনাটি ঘটে। তপসিয়া থানার ঠিক উপরে মা ফ্লাইওভার ও এজেসি বোস ফ্লাইওভারের সংযোগস্থলে চালকের গলায় জড়িয়ে যায় চীনা মাঞ্জা। আংশিক চোট লাগে চালকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাওড়ার ওই বাসিন্দা বলেন, আমার স্ত্রীর গোড়ালিতে মারাত্মক চোট লাগে। ফ্লাইওভারের উপরেই একের পর এক গাড়ি গিয়েছে। কেউ এই পরিস্থিতি দেখেও দাঁড়াননি। চিকিৎসকরাও এড়িয়ে গিয়েছেন। অভিযোগ, দুর্ঘটনা কবলিত ওই তরুণীকে দেখে তাঁর স্বামীকে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ডিউটি থেকে ফিরছি। আপনারা অন্য গাড়ি দেখে নিন।’ আবার ‘ডক্টর’ লেখা একটি গাড়ি থেকে মুখ বের করে এক যাত্রী বলেন, ‘আমার দাদা চিকিৎসক। আমি নই। তাঁর অনুমতি ছাড়া গাড়িতে করে আহত তরুণীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’ আম জনতার পাশাপাশি চিকিৎসকদের মানবিকতাও কি লোপ পেল? শনিবারের বিকেলের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর এই প্রশ্নই তুলছে ভুক্তভোগী পরিবার। 

    আহতের স্বামী বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর কীভাবে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাব? যখন তীব্র আশঙ্কায় ভুগছি, তখনই সামনে এসে দাঁড়ায় কলকাতা পুলিসের একটি গাড়ি। দেবদূতের মতো নেমে আসেন কমব্যাট ব্যাটালিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। তিনি পুলিসের একাধিক মহলে ফোন করতেই মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে আসে গাড়ি। তাতে করেই একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই স্ত্রীকে।’ যোগাযোগ করা হয় এসিপি পিনাকীরঞ্জন দাসের সঙ্গে। গোটা ঘটনাটি জানিয়েছেন তিনি। শনিবার ওই সময়ে অফ ডিউটিতে ছিলেন অফিসার। রুবির দিক থেকে ফ্লাইওভারে ওঠেন তিনি। পার্ক সার্কাস কানেক্টরে দুর্ঘটনাগ্রস্তকে দেখেই লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করেন পুলিস আধিকারিক। এরপরেই অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য স্থানীয় ট্রাফিক গার্ডকে নির্দেশ দেন। ততক্ষণে যথেষ্ট যানজট তৈরি হয়েছে ফ্লাইওভারের উপরে। তার জেরে নিজের গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পিনাকীবাবু। সেই মুহূর্তেই এসে পড়ে পুলিসের পিসিআর ভ্যান। তাতে করেই দুর্ঘটনাগ্রস্তকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। 

    প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই বলেন, আর জি করের ঘটনায় পুলিসকে ‘কাঠগড়ায়’ তুলে আন্দোলনে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। অথচ এখানে যে ডাক্তাররা অমানবিকতার পরিচয় দিলেন, তার জন্য ‘জাস্টিস’ কে দেবেন? 
  • Link to this news (বর্তমান)