• বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ৯ লক্ষাধিক মানুষ, টেস্ট কম হল ১০ লক্ষ!
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির প্রথম ১৫ দিনেই রাজ্যবাসীর সম্ভাব্য দুর্ভোগ আন্দাজ করা গিয়েছিল। বিশেষত বিনামূল্যের সেরা চিকিৎসাই যাঁদের একমাত্র ভরসা, সেই গরিব ও মধ্যবিত্তরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। প্রথম ১৫ দিনে এমন চিকিৎসা বঞ্চিতের সংখ্যা ৬ লক্ষ! কর্মবিরতির একমাস পূর্তির পর ছবিটা কেমন? পরিস্থিতি এখন আরও ভয়াবহ। স্বাস্থ্যদপ্তরের হিসেব বলছে, প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন ধরনের জরুরি রোগ ও রক্ত পরীক্ষাও অনেক কম হয়েছে। সংখ্যাটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে—১০ লক্ষ! সাধারণ সময়ে মাত্র একমাসে রাজ্যে ২৪টি মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতার তিনটি বড় হাসপাতাল মিলিয়ে ২৭টি জায়গায় ২০ লক্ষ রাজ্যবাসী আউটডোরে ডাক্তার দেখাবার সুযোগ নেন। সেখানে ৯ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা হয়েছে ১১ লক্ষের মতো। অর্থাৎ বঞ্চনার শিকার ৯ লক্ষ মানুষ। এই সময়কালে রোগ ও রক্ত পরীক্ষা ১৭ লক্ষাধিক থেকে কমে হয়েছে মাত্র ৭ লক্ষ! গত একমাসে এই ২৭টি হাসপাতালে দৈনিক গড়ে মাত্র চারটি অপারেশন হয়েছে! 

    তবে সম্প্রতি পিজিতে অপারেশনের সংখ্যা বেড়ে ৩০টি হয়েছে। সংখ্যাটি এনআরএসে ২৭টি। বাকি ২৪টি মেডিক্যাল কলেজের বেশিরভাগেই দৈনিক অপারেশনের সংখ্যা দুই সংখ্যা ছোঁয়নি। এর থেকেই পরিষ্কার, কর্মবিরতির ফলে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার কোন কোন জায়গায় কতটা ক্ষতি হযেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই এসব দিকে নজর দেওয়া উচিত। অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পরই যাতে দ্রুত কিছু নীতিগত পরিবর্তন করা যায়, তার জন্যই এটা জরুরি। এখনই সতর্ক না-হলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও কঠিন হতে পারে। 

    প্রথমত, আউটডোরে রোগীদের রক্তচাপ, নাড়ির গতি, ওজন, সুগারসহ শারীরিক অবস্থার প্রাথমিক প্রধান সূচকগুলি মেপে থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারপর আসে রোগীর হিস্ট্রি নেওয়া এবং আনুষঙ্গিক কাজ। ইন্ডোরে রক্ত টানা থেকে শুরু করে চ্যানেল করা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর রোগীর শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখা, রাউন্ড দেওয়া প্রভৃতি সবেতেই জুনিয়র ডাক্তারদের অংশগ্রহণ আবশ্যিক। আর ছোট বড় অপারেশনে সিনিয়র ডাক্তারদের সাহায্যকারী হিসেবে কখনও, কখনও আবার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী হিসাবে জুনিয়র ডাক্তারদের অংশগ্রহণ ‘মাস্ট’। তাঁরা টিমে না-থাকলে মাঝারি এবং বড় কোনও অপারেশন করা প্রায় অসম্ভব। 

    এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসার কাজগুলির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় গত একমাস বড় ডাক্তারদের অনেকেরই কাহিল অবস্থা হয়েছে। রক্ত টানা, চ্যানেল করার মতো কাজও তাঁদেরকেই করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, জুনিয়র ডাক্তারদের মুখাপেক্ষী হওয়ায় একটি বড় অংশের চিকিৎসক সেগুলি সম্পর্কেও অবগত হয়েছেন নতুন করে। আপ্রাণ লড়াই করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তবে ওয়ার্ডগুলির ভিতরের পরিস্থিতি কী, তা তাঁরাই জানেন, আর জানেন হাতেগোনা রোগীরা, যাঁরা নেহাত প্রাণ বাঁচাতে ভর্তি হয়েছেন এই ‘অসময়ে’।
  • Link to this news (বর্তমান)