এই সময়: ২০১৭ সাল। হংকং। কাউলুনের কুইন এলিজ়াবেথ হাসপাতাল। সেখানকার এক নার্সিং ছাত্র হংকংয়ের পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেন এক বিদেশি অর্থোপেডিক ডাক্তারের বিরুদ্ধে। সেই ডাক্তার আবার বাঙালি! অভিযোগ ছিল, আপত্তিকর ভাবে তাঁর শরীরে নাকি হাত দিয়েছেন ওই ডাক্তার। সেই অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে সেই ডাক্তারকে।‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর পোর্টালে প্রকাশিত সাত বছর পুরোনো সেই খবর নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কারণ, সেই বাঙালি ডাক্তারের নাম সন্দীপ ঘোষ। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, আরজি কর হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত, তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনাতেও নাম জড়িয়ে যাওয়া সন্দীপই সে-ই ব্যক্তি।
আরজি করের প্রাক্তন এই অধ্যক্ষের নানা ‘কীর্তি’ নিয়ে এখন মুখ খুলছেন অনেকে। প্রকাশ্যে আসছে তাঁর একের পর এক কাণ্ড-কারখানা। এর মধ্যেই ভেসে উঠেছে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর ওই খবর। ২০১৭-র মে মাসে তিনি তখন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক। একটি চিকিৎসা-শিক্ষা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে হংকংয়ের কাউলুন শহরে যান। তাঁর সেই সফর আবার সরকারি অনুমতি ছাড়াই হয়েছিল বলে অভিযোগ।
আরও অভিযোগ, এর দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্সও হয়। যদিও রিপোর্ট পরে ধামাচাপা পড়ে যায় বলে একটি সূত্রের দাবি। ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এ ২০১৭-র ২৯ মে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সে বছর ৮ এপ্রিল কাউলুনের কুইন এলিজ়াবেথ হাসপাতালের এক নার্সিং ছাত্রের বাঁ দিকের পশ্চাদ্দেশে আপত্তিকর ভাবে চাপড় মারার জন্য শ্লীলতাহানির দায়ে অভিযুক্ত হন সন্দীপ ঘোষ নামে এক ভারতীয় সরকারি অর্থোপেডিক চিকিৎসক।
কাউলুন সিটি কোর্টের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট লিউং লাই-ইনকে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই নার্সিং ছাত্র অভিযোগ করেছিলেন, বছর পঁয়তাল্লিশের সন্দীপ তাঁর পশ্চাদ্দেশে চাপড় মেরে তাঁর গোপনাঙ্গ ছুঁতে চেয়েছিলেন। এবং তার পর বলেছিলেন, ‘ডু ইউ লাইক দিস?’
মর্নিং পোস্টের খবর অনুযায়ী, এই অভিযোগে সন্দীপকে হংকং পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেয়। সেখানে তাঁকে কয়েক দিন নাকি থাকতেও হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতে তোলা হলে সন্দীপের দাবি ছিল, শোল্ডার ডিসলোকেশনের সমস্যাকে কী ভাবে ফিক্স করতে হয়, সেটাই হাতে-কলমে দেখাচ্ছিলেন তিনি। সে সময়েই অনিচ্ছাকৃত ভাবে ওই নার্সিং ছাত্রের পশ্চাদ্দেশে তাঁর হাত লেগে গিয়ে থাকতে পারে। এবং ‘ফিক্স’ করার পরে তিনি বলেছিলেন, ‘ডু ইট লাইক দিস।’ তাঁর দাবি ছিল, নিছকই ভুল বোঝাবুঝি থেকে এত বড় অভিযোগের সূত্রপাত।
সাত বছর আগের সেই কথা এখনও বিলক্ষণ মনে আছে সন্দীপের অন্যতম পেশাগত সতীর্থ, অর্থোপেডিক চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়েস্টবেঙ্গল অর্থোপেডিক অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য উৎপল বলেন, ‘যত দূর মনে পড়ছে, সে সময়ে সন্দীপের বিদেশ সফর নিয়ে একটা গোলমালও হয়েছিল। এবং হংকংয়ে গিয়ে উনি শ্লীলতাহানির দায়ে জেলও খেটেছিলেন। অর্থোপেডিক অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে সে সময়ে ওঁকে ছাড়িয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’
গত ৯ অগস্ট আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের পর সন্দীপকে ঘিরে উঠে আসছে একের পর এক অভিযোগ। অপরাধের তথ্যপ্রমাণ লোপাট থেকে, তাঁর দীর্ঘ দিনের দুর্নীতি, সব কিছু নিয়েই সোচ্চার বিভিন্ন মহল। তদন্তে নেমে দুর্নীতির দায়ে সিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। এমন আবহেই ভেসে উঠেছে হংকংয়ের সেই ঘটনার কথা।
ঠিক যেমন অনুমতি ছাড়া তাঁর বিদেশ যাওয়ার অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যায়, তেমনই ওই শ্লীলতাহানির ঘটনাও সে সময়ে রয়ে যায় অন্তরালে।