• রোগীর মৃত্যুতে ফের কাঠগড়ায় কর্মবিরতি
    এই সময় | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: হুগলির কোন্নগর থেকে রেফার হয়ে আরজি কর মেডিক্যালে আসা দুর্ঘটনাগ্রস্ত এক রোগী তিন ঘণ্টা কার্যত বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে মারা গিয়েছেন— দু’দিন আগেই এমন অভিযোগ উঠেছে। এবং এক্ষেত্রে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির দিকেই আঙুল উঠেছে। এ বার তিন দিন আগে এসএসকেএম হাসপাতালেও বিনা চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা রাজীব দেব (৩৩) দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৪ সালে তাঁর মায়ের কাছ থেকে নিয়ে রাজীবের একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। তার পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই থাকতে হতো রাজীবকে। গত ৩ সেপ্টেম্বর পেটে প্রবল ব্যথা নিয়ে এসএসকেএমে ভর্তি হন রাজীব।

    মৃতের পরিবারের দাবি, ৫ তারিখ রাতে রাজীবের অবস্থা আরও খারাপ হয়। তাঁর পেট ফুলতে শুরু করে। পরিবারের সদস্যরা বারবার ডাক্তারদের কাছে অনুরোধ করেন ছেলের ক্যাথিটার বদলে দিতে। অভিযোগ, তাঁদের কথা কানে তোলেননি কেউ। ভোররাতে মৃত্যু হয় ওই যুবকের।

    পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, জুনিয়র ডাক্তাররা রোগী না দেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই কারণেই মায়েদের কোল খালি হয়ে যাচ্ছে। মৃতের বোন শম্পা বিশ্বাস বলেন, ‘নির্যাতিতা তরুণীর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার চাই। কিন্তু ডাক্তারদের কর্মবিরতির জন্যই আমার ভাই চলে গেল। চিকিৎসার জন্য মানুষ জুনিয়র ডাক্তাদের ভগবানের আসরে বসিয়েছে। কিন্তু অনেক বার ডেকেও সে দিন কোনও ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি।’

    যদিও চিকিৎসকদের যুক্তি, ‘ওই রোগীর অবস্থা অত্যন্ত জটিল ছিল। মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। উনি বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন বলা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। সেপসিস হয়ে পেট ফুলে ওঁর অ্যাসাইটিস হয়ে গিয়েছিল, সেই কারণেই মৃত্যু। শুক্রবার আরজি করে রেফার করা হয়েছিল হুগলির কোন্নগরে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম বিক্রম ভট্টাচার্য নামে এক যুবককে। প্রায় তিন ঘণ্টা তিনি চিকিৎসা না-পেয়ে মারা যান বলে অভিযোগ ওঠে।

    এই ঘটনার পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ডাক্তারদের আন্দোলনের দাবি ন্যায্য ও সঠিক। কিন্তু জরুরি চিকিৎসা পরিষেবাকে ব্যাহত করে এই কর্মবিরতি করা উচিত নয়। আন্দোলনও মানবিক হওয়া উচিত। এ দিন আরজি কর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘আপনারা আন্দোলন করছেন, করুন। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসুবিধা ও যন্ত্রণার কথা বিবেচনা করে কাজে ফিরুন।’

    অন্য দিকে, রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে দমদমের একটি হাসপাতাল। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে শুক্রবার সকালে দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অঞ্জু মণ্ডল (৩৯)। শনিবার বিকেলে তাঁর মেয়ে হয়। পরিবারের দাবি, ঘণ্টাখানেক পরে তাঁদের জানানো হয়, অঞ্জুর আরও একটি অপারেশনের প্রয়োজন। এরপরেই অঞ্জু মারা যান বলে অভিযোগ পরিবারের। যা শুনে হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা।

    তাঁদের দাবি, কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে সুস্থই ছিলেন অঞ্জু। চিকিৎসকদের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দমদম থানায় অভিযোগ জানিয়েছে মৃতের পরিবার। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা জানিয়েছেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
  • Link to this news (এই সময়)