• অকুস্থলের কাছে সংস্কারের কাজ, জানত না লালবাজার
    এই সময় | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: ঠিক একমাস আগে ৯ অগস্ট সকালে আরজি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ। নির্যাতিতা চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটনার রাতে যে তিনজন ডাক্তারের ডিউটি ছিল, তাঁদের দু’জন ঘুমিয়েছিলেন ওই সেমিনার রুম লাগোয়া স্লিপ স্টাডি রুম ও একজন শুয়েছিলেন তার সংলগ্ন রেসিডেন্ট ডক্টর্স রুমে।আরজি করের ধর্ষণ-খুনের তদন্ত শুরু হওয়ার পরে আরজি কর কর্তৃপক্ষ যে ভাবে অকুস্থলের সামনেই নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু করেছিলেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক জোরালো হয়েছে। সংস্কারের কাজ চলাকালীন ওই স্লিপ স্টাডি রুমের দেওয়াল ভাঙা পড়ে, ভাঙা হয় সংলগ্ন একটি শৌচালয়ও। লালবাজার সূত্রের দাবি, এই সংস্কার কাজের বিষয়ে পুলিশকে জানানোই হয়নি। সেটা জানা থাকলে তা আগেই বন্ধ করা হতো।

    বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই এই ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই নির্মাণ ও সংস্কারের কাজের সিদ্ধান্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই নিয়েছিলেন বলে দাবি পুলিশের। পুলিশ সূত্রের দাবি, তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনাটি ঘটেছে সেমিনার রুমেই। ঘটনার সময়ে চারতলার করিডরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতামত, সে রাতে সেমিনার রুমের আশপাশে থাকা সংশ্লিষ্টদের বয়ান— সবকিছু খতিয়ে দেখে তাঁরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত।

    সেমিনার রুমের সংলগ্ন স্টাডি রুম বা শৌচালয়ের দেওয়াল ভাঙা হলেও তাতে তদন্তে প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবু তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত এই চত্বর অক্ষত থাকা উচিত ছিল। সিবিআই সূত্রের খবর, ঘটনার রাতে নির্যাতিতার সঙ্গে যে তিনজন জুনিয়র ডাক্তারের ডিউটি ছিল, তাঁরা ছাড়াও অকুস্থলের আশপাশে আরও চারজন নার্স ছিলেন। দু’জন চেস্ট মেডিসিন বিভাগের, একজন টিবি ওয়ার্ডে এবং একজন ছিলেন স্লিপ স্টাডি রুম ও রেসিডেন্টস ডক্টর্স রুমের মাঝের প্যাসেজে। ওই ডাক্তার ও নার্সদের পুলিশ আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।

    সিবিআই ইতিমধ্যে ওই ডাক্তারদের পলিগ্রাফ টেস্টও করিয়েছে। যদিও সিবিআই ঘটনার তদন্তভার নেওয়ার ২৫ দিন বাদেও ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অন্য কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। কলকাতা পুলিশ সূত্রের দাবি, ওই তিন চিকিৎসক দাবি করেছিলেন তাঁরা সে রাতে ৩টে থেকে সাড়ে ৩টের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের একজন নির্যাতিতাকে শেষবার রাত ৩টে নাগাদ সেমিনার রুমে ম্যাট্রেসের উপর ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছিলেন।

    এই প্রতিটি বয়ান হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ, নার্স-সহ অন্যদের বয়ানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। ক্রস এগজ়ামিনও করা হয়েছে। সেখানে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি। সেই যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। এ সবের পরেও পুলিশ সূত্রের দাবি, যদি ওই তিনজন ডাক্তারের মধ্যে এক বা একাধিক লোক সে রাতে তরুণী চিকিৎসকের উপর চড়াও হতেন, তাহলে নির্যাতিতার শরীরে যে ধরনের আঘাত থাকা উচিত ছিল, তেমনটা ময়নাতদন্তে মেলেনি।

    নির্যাতিতাও তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ওই তিনজনের কারও শরীরেও আঁচড় বা প্রতিরোধের চিহ্ন থাকতে পারত, সেটাও পাওয়া যায়নি। নির্যাতিতার নখে একজনেরই শরীরের টিস্যু পাওয়া গিয়েছে, সেটা ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের। একই ভাবে সঞ্জয়ের নখেও নির্যাতিতার শরীরের টিস্যু মিলেছে। আর যদি সঞ্জয় বা এই তিনজনের বাইরে কেউ সেমিনার রুমে ঢুকে অপরাধ করে, সেটাও সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ত। সিসিটিভি যদি ড্যামেজ করা হয়ে থাকে, সেটাও ফরেন্সিক পরীক্ষায় ধরা পড়ত— তেমন কিছু কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি।

    কলকাতা পুলিশের সূত্রের খবর, তরুণী চিকিৎসক ঘটনার রাত ২টো ৩৫ মিনিট নাগাদ তাঁর এক আত্মীয়কে মোবাইল থেকে মেসেজ করেছিলেন। অর্থাৎ তখনও তিনি জীবিত ছিলেন ধরে নেওয়া যায়। আর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর মৃত্যু হয়েছে রাত সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৪টের মধ্যে।

    তবে এই সময়ের মধ্যে সঞ্জয় ছাড়া বাইরের কাউকে সেমিনার রুমে ঢুকতে বা বেরোতে দেখা গিয়েছে, এমন কোনও তথ্যও সামনে আসেনি। ওই স্টাডি রুম বা রেসিডেন্ট ডক্টর্স রুম বা তার সংলগ্ন শৌচালয় থেকেও আর কাউকে ঢুকতে-বেরোতে দেখা যায়নি। অকুস্থল ওই সেমিনার রুম ছাড়া অন্য কোথাও হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও দাবি কলকাতা পুলিশ সূত্রের।
  • Link to this news (এই সময়)