এ কী হলো! লুকিয়ে কাঁদেন তারাশঙ্করের 'বিশু ডাক্তার'
এই সময় | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হেমাভ সেনগুপ্ত, লাভপুর
বয়স ৯৭। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদরের ‘বিশু ডাক্তার’। লাভপুরে সেই যে ১৯৫৭ সালে ছোট্ট একটা ঘরে ডাক্তারি শুরু করেছিলেন, আজও চলছে। দু’দিন আগেও চশমা লাগত না, এখন খবরের কাগজ পড়তে, টিভি দেখতে দরকার পড়ে। আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনায় ইদানীং ‘অস্থির’ হয়ে উঠেছেন। তাঁর সময়ে আরজি কর, আর বর্তমানে এই কলেজের হাল, আকাশ-পাতাল পার্থক্য বলে জানিয়েছেন সুকুমার চন্দ্র ওরফে সেই বিশু ডাক্তার।তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠানে এমন নির্মম অত্যাচার? চোখে জল চলে আসে তাঁর। বলেন, ‘আরজি করের গেট দিয়ে ঢুকলে মনে হতো মন্দিরে ঢুকলাম। দ্রুত বিচার করে দোষীদের ফাঁসি দেওয়া দরকার।’ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘ওঁরা ঠিকই করেছেন। কাগজে ওই সংক্রান্ত খবর দু’লাইন পড়ার পরে সরিয়ে রাখি। টিভির পর্দায় ওখানকার অবস্থা দেখে কষ্ট হয়। তখন টিভি বন্ধ করে দিতে বলি।’
এখনও প্রতিদিন রাত বারোটা পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন কী আবিষ্কার হলো, তার খোঁজ রাখেন। আবার নিয়ম করে সকাল সাড়ে ছ’টায় চেম্বার খোলেন। চলে দুপুর একটা পর্যন্ত। বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্তও চিকিৎসা করেন। দৈনিক ৬০-৭০ জন রোগী দেখেন। ধরাবাঁধা কোনও ফিজ় নেই। ৫০ বা ১০০ টাকা, যে যা দেয়, তাতেই খুশি হন তিনি।
সেই টাকা থেকে আবার ২০ টাকা করে সরিয়ে রাখেন তারাশঙ্করের কাছাড়ি বাড়ি ‘ধাত্রী দেবতা’-র রক্ষণাবেক্ষণে। ‘জগন্নাথের রথ’, ‘সুখ সারি’ ছোটগল্পে তারাশঙ্কর যে ডাক্তার চরিত্রের অবতারণা করেছিলেন, সেই চরিত্রের নাম ‘বিশু ডাক্তার’। তারাশঙ্করের নির্দেশেই যে তাঁর সারা জীবন ‘ভিলেজ ডাক্তার’ হয়ে লাভপুরের মাটিতে থেকে যাওয়া, এখনও গর্ব করে বলেন সে কথা।
তাঁর কথায়, ‘আমি ডাক্তারি পাশ করার পর রেলে চাকরি পাই। বাইরে যাব বলে বেডিং নিয়ে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে পরিচিত একজনের কাছে সেই বেডিং রেখে টালা পার্কে তারাশঙ্করবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। প্রণাম করার পরে তিনি বললেন, ‘তোকে চাকরি করতে হবে না। লাভপুরে ফিরে যা। ডাক্তারি কর। এলাকার মানুষের উপকার হবে। দেশের উপকার হবে। তোরও ভালো হবে।’ হাওড়া থেকে আর ট্রেন ধরা হয়নি তাঁর।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত আরজি করে পড়াশোনা করেছেন। থাকতেন হস্টেলের ২২ নম্বর ঘরে। সেখানকার অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ আর্থিক দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। নিজের সময়ে অধ্যক্ষদের কথা বলতে গিয়ে বিশু ডাক্তারের ফুটে ওঠে ক্ষোভ, ‘আমাদের সময়ে অধ্যক্ষ ছিলেন এম এন বোস। তিনি মোহনবাগানের সভাপতি ছিলেন। টাকাপয়সা নয়ছয়? ও সবের কোনও প্রশ্নই ছিল না।’