পুজোর বাকি আর মাত্র একমাস, বিক্রিতে মন্দা তাঁতের শাড়িতে
এই সময় | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
আজ থেকে ঠিক একমাস পর, ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী। পুজোর মাসখানেক আগের এই সময় থেকেই কেনাকাটার ধুম পড়ে যায় হাটেবাজারে-শপিং মলে। একে মাসের শুরু, কমবেশি সবার অ্যাকাউন্টে বেতন ক্রেডিট হয়ে গিয়েছে। বিক্রেতারাও জানেন ব্যস্ততা বাড়বে দোকানে। কিন্তু কই সেই ব্যস্ততা? শহর হোক বা শহরতলি পুজোর বাজার কোথাও এখনও জমেনি এ বার।একই হাল কালনা মহকুমার তাঁত কাপড়ের হাটগুলিতেও। কারণ? তাঁত ব্যবসায়ীদের মতে, আরজি করের ঘটনায় বিচার চেয়ে রোজই পথে নামছেন মহিলারা। শহর-গ্রাম বা গলি-রাজপথ নির্বিশেষে হচ্ছে মিছিল। তাই তাঁরা এখনও হাটমুখো হননি এ বার।
কালনার অন্যতম বড় শাড়ির বাজার সমুদ্রগড় গণেশচন্দ্র তাঁত কাপড়ের হাট। রবিবার ছুটির দিনেও সেখানে হাতে-গোনা কয়েকজন ক্রেতাকে দেখা গেল। এ বারের একদম লেটেস্ট ডিজ়াইনের দুর্গাশাড়ি নিয়ে হাটে বসলেও তা বিকোচ্ছে না বলে জানালেন বিক্রেতারা। পুজোর কেনাকাটার থেকেও আরজি কর আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বহু মহিলা।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগে রবিবারও ডাক দেওয়া হয়েছে রাত জাগার। আর এ সবের জন্যই অনেকে এ বার পুজোর বাজার নিয়ে এখনও সে ভাবে চিন্তাভাবনা করছেন না বলে মনে করছেন তাঁতিরা। কালনা মহকুমার কালনা, ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, নসরতপুর, শ্রীরামপুর এলাকার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ তাঁতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। তাঁতিদের স্বার্থে রাজ্য সরকার ধাত্রীগ্রাম ও শ্রীরামপুরে দু’টি তাঁতের হাট গড়ে তুলেছে।
তাঁতহাটে যেমন বাইরের ব্যবসায়ীরা সরাসরি তাঁতির কাছ থেকে কাপড় কিনতে আসেন তেমনই শান্তিপুর, ধনেখালি, ফুলিয়া, বেগমপুরের মতো জায়গার তাঁতিরাও আসেন শাড়ি বিক্রি করতে। সাধারণ ক্রেতারা দোকানের থেকে হাটে কিছুটা কম দামে শাড়ি পান বলে অনেকেই তাঁতের হাটেই পুজোর কেনাকাটা সারেন।
সমুদ্রগড় গণেশচন্দ্র তাঁত কাপড় হাটে বেশ কয়েক বছর ধরে শাড়ি বিক্রি করছেন তাঁতি ননী সূত্রধর। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বার পুজোর আগে এই সময়ে বাজার বেশ জমে উঠলেও এ বার ছবিটা অন্যরকম। মহিলা ক্রেতাদের উপস্থিতি এখনও বেশ কম। অনেক মহিলাই আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে পথে নামছেন। তাঁদের অনেকেই বিচার কী মেলে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন।’
তাঁতি ঝন্টু ঘোষের বক্তব্য, ‘হ্যান্ডলুম শাড়ির আঁচলে দুর্গার মূর্তির কম্পিউটারাইজ়ড প্রিন্ট করা হয়েছে এ বার। দামও রাখা হয়েছে নাগালের মধ্যে- ৩০০ টাকা। অনেকে দেখছেন, কিনছেন। কিন্তু যতটা ভেবেছিলাম ততটা বিক্রি হচ্ছে না। এ ছাড়া পাসমিনা, হাকুবা, জবা শাড়িও রয়েছে। সেই সব শাড়ির ক্রেতাদের ঢল নামেনি এখনও।’
তবে দিনকয়েক পড়ে বাজার আবার জমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তাঁতি নিরঞ্জন হালদার। তাঁর কথায়, ‘ব্যবসা এখনও পর্যন্ত মোটামুটি চলছে। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যে হাটের পুরোনো ছবি দেখা যাবে। একদম শেষে পুজোর কেনাকাটা সবাই করবেন।’ একই বক্তব্য সমুদ্রগড় গণেশচন্দ্র কর্মকার তাঁত কাপড় হাটের অন্যতম কর্ণধার সুবীর কর্মকারেরও। তিনিও তাকিয়ে রয়েছেন পুজোর আগের শেষ কয়েকদিনের দিকে।