• মালদায় এল রাজস্থানে খুন হওয়া যুবকের দেহ
    এই সময় | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, মালদা: ২০১৭ সালের ডিসেম্বর। রাজস্থানের রাজাসমন্দে প্রকাশ্য রাস্তায় কোপানোর পরে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল মালদার মহম্মদ আফরাজুলকে। পরে সেই নৃশংস হত্যার ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাত বছর আগের ঘটনা হলেও আফরাজুলকে পুড়িয়ে মারার সেই ঘটনা এখনও ভোলেনি মালদার মানুষ।সেই সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল, ভিনরাজ্যে, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি বিদ্বেষ নিয়ে। সেই ক্ষতটাই আবার উস্কে দিলো সেই রাজস্থানেই মালদার আর এক শ্রমিককে পিটিয়ে খুন করার ঘটনা। হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা মতি আলিকে (৪০) এমন ভাবে পেটানো হয় যে তাঁর মাথা, পেটে গভীর ক্ষত হয়েছিল। অপারেশন করেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

    রবিবার সকালে মতির মরদেহ গ্রামে ফিরতেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে তৃণমূল বিক্ষোভ মিছিল করে। মতি গত ২০ বছর ধরে জয়পুরে একটা সোনার দোকানে কাজ করতেন। গ্রামের বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী রৌশনা ও ছোট দুই সন্তান।

    রৌশনা বলেন, ‘৩ সেপ্টেম্বর স্বামী ফোন করে বলেন, কষ্ট করে দুই সন্তানকে মানুষ কোরো। ভালো থেকো।’ স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে কারণ জানতে চান তিনি। মতি জানায়, তাঁর সঙ্গে যারা কাজ করে তারা খাওয়ার সময়ে খুব মেরেছে। যন্ত্রণা হচ্ছে। বোধ হয় পেট ফেটে যাবে। তিনি আর বাঁচবেন না। মতির এক আত্মীয় বাহারান, মুম্বইতে কাজ করেন। রৌশনা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরদিন সকালে বাহারান জয়পুরে পৌঁছে যায়। রবিবার সকালে মতির দেহ নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন।

    বাহারান বলেন, ‘দাদাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে একটা নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অপারেশন হয়। শুক্রবার সকালে মতি মারা যায়।’ তিনি বলেন, ‘এ টুকু জানতে পেরেছি দুপুরে খাবার খাওয়ার সময়ে কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তার পরেও ওরা প্রচণ্ড মারধর করে।’

    রবিবার সকালে জেলার দুই মন্ত্রী তাজমুল হোসেন ও সাবিনা ইয়াসমিন, জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া, পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের সদস্য রফিকুল হোসেন মতির পরিবারের সঙ্গে দেখা করে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য করেন। স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী তাজমুল হোসেন জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা এবং পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড থেকে মৃতদেহ আনার খরচ হিসেবে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

    মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিহত শ্রমিকের স্ত্রীর বিধবা ভাতা, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছতেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে তাজমুলের নেতৃত্বে তৃণমূল ওই গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল করে।

    সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অন্য রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ কাজ করেন। ভিনরাজ্যের বলে তাঁদের কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। অথচ, বিজেপির শাসনে থাকা রাজ্যগুলোতে পরিকল্পিত ভাবে বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। নানা ভাবে হেনস্থার পাশাপাশি খুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। মতিকে খুন করা সেই ধারাবাহিক অপরাধেরই অঙ্গ।’

    যদিও মালদা উত্তর কেন্দ্রের সাংসদ খগেন মুর্মুর বক্তব্য, ‘আমার কেন্দ্রের এক ব্যক্তি রাজস্থানে খুন হয়েছেন এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু তৃণমূল সেটা নিয়ে রাজনীতি না করে বরং বলুক, লক্ষ লক্ষ মানুষ এ রাজ্যে কেন কাজ পাচ্ছে না। কেন তাঁদের অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে।’
  • Link to this news (এই সময়)