• ‘এমন ডাক্তার চাই না,’ কাকদ্বীপে বিক্ষোভ হয়েছিল সন্দীপ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। এদিকে সেই ঘটনার পরে ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দেখা গিয়েছিল সরকারি চিকিৎসক বিরুপাক্ষ বিশ্বাসকে। আর সেই বিরুপাক্ষকে কাকদ্বীপ এলাকায় বদলি করা হয়েছিল। তারই প্রতিবাদে কিছুদিন আগেই রাস্তায় নেমেছিলেন সুন্দরবনের কাকদ্বীপ শহরের বাসিন্দারা। এটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।খবর হিন্দুস্তান টাইমস সূত্রে। 

    শুধু কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালের বাইরেই নয়, রাস্তায়ও বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন শহরের বাসিন্দারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, 'বাম দলগুলিও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

    বৃহস্পতিবারের আন্দোলনে অংশ নেওয়া গৃহবধূ পদ্মা ঘোরাই বলেন, ‘বিরুপাক্ষ বিশ্বাসের আগমন আমাদের হাসপাতালে একই ধরনের অপরাধের দিকে পরিচালিত করবে না তার কী গ্যারান্টি আছে?’

    পূর্ব বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে বিশ্বাসকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত কাকদ্বীপ হাসপাতালে বদলি করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। পরে অবশ্য় তাকে সাসপেন্ড করা হয় বলে খবর। 

    আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করার কিছুদিনের মধ্যেই এই বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সিবিআই সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং পলিগ্রাফ টেস্টও করানো হয়েছিল।

    তবে বিরুপাক্ষ বিশ্বাস দাবি করেছিলেন, তাঁর কাকদ্বীপে বদলি হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক প্রক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

    'আমার স্নাতকোত্তর নম্বরের ভিত্তিতে কয়েক মাস আগে মেধা ভিত্তিক কাউন্সেলিং করা হয়েছিল। আমাকে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার বা জলপাইগুড়ি বা দক্ষিণবঙ্গের কাকদ্বীপে যাওয়ার বিকল্প দেওয়া হয়েছিল। আমি কাকদ্বীপকে বেছে নিয়েছিলাম।

     সন্দীপ ঘোষের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে পরিচিত ছিলেন বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। সেই সন্দীপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গত ৯ অগস্ট থেকে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল পড়ুয়ারা লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন।

    ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে কাকদ্বীপ হাসপাতালের নার্সরাও বিক্ষোভ দেখান, জুনিয়র ডাক্তাররা বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান।

    ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার সাগ্নিক মিধ্য বলেন, আমরা চাই না বিশ্বাসের মতো মানুষ আমাদের জেলার কোনও হাসপাতালে পোস্টিং হোক।

    তবে কাকদ্বীপ হাসপাতালের উচ্চপদস্থ আধিকারিক বা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা এই আন্দোলন নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

    ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখা সহ বিভিন্ন সংস্থার সিনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ, সন্দীপ ঘোষ বেশ কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় স্বাস্থ্য বিভাগে একটি চক্র চালাচ্ছিলেন, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। 

    আন্দোলন চলাকালীন একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়, যেখানে বিশ্বাসকে চূড়ান্ত বর্ষের মেডিক্যাল পড়ুয়াকে হুমকি দিতে শোনা যায়, বিশ্বাসের নির্দেশ না মানলে তিনি সার্টিফিকেট পাবেন না।

    বিরূপাক্ষ তখন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, অডিও ক্লিপটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, কণ্ঠটি তার নয়।

    তবে ৩১ বছরের স্নাতকোত্তর চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের কথা শুনে ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন তিনি৷ যদিও তিনি দাবি করেন, জরুরি ভবনের তৃতীয় তলায় বক্ষব্যাধি বিভাগের সেমিনার কক্ষে তিনি যাননি ৷

    তবে সূত্রের খবর, এতদিনে নড়েচড়ে বসছে সরকার। এবার দুই চিকিৎসক অভীক দে ও বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য় দফতর। চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে দুজনকেই। যারা এতদিন সবার মাথার উপর ছড়ি ঘোরাতেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিল সরকার? তবে এটা কতটা আন্তরিক আর কতটা ড্যামেজ কন্ট্রোল তা নিয়েও প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)