• মহিষাদলে মহিলাদের অতিরিক্ত আয়ের পথ দেখাচ্ছে থিম-পুজো
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: দুর্গাপুজোয় থিমের রমরমা গ্রামের মহিলাদের কাছে বাডতি আয়ের সুযোগ এনে দিয়েছে। মৃন্ময়ী দশভুজাকে সাজাতে মহিষাদলের গ্রামের চিন্ময়ী দশভুজাদের উপরই ভরসা করছেন শিল্পীরা। রান্নার কাজ, ঘরকন্না, বাজারহাট, ব্যাঙ্কে টাকা তোলা, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা সামলে মণ্ডপসজ্জার নানা কাজে হাত লাগাচ্ছেন মহিলারা। মহিষাদলের লক্ষ্যা, তাজপুর, গড়কমলপুর, ইছাপুর গ্রামের দশভুজাদের অস্ত্র তাঁদের শিল্পী মন ও তুলির জাদু। মফস্সল ও গ্রামে থিমের পুজোর চল বাড়তেই ডেকরেটর, মণ্ডপ শিল্পী ও প্রতিমার কারিগরদের ভরসা হয়ে উঠেছেন মহিলারা। দ্রুত কাজ শেষ করতে ওয়ার্কশপে রাতও জাগছেন তাঁরা। কেউ কেউ বাড়িতেই রাতদিন কাজ করছেন। উপকূলের জেলা থেকে ওই শিল্পকর্ম কয়েকদিন পর পৌঁছবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সহ উত্তরবঙ্গেও। মণ্ডপসজ্জার বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী থেকে সাধারণ মহিলারা পুজোর মরশুমে বাড়তি ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করছেন। তাতে হাল ফিরছে অসহায় দশভুজাদের সংসারের। 

    মহিষাদলের গোপালপুর এলাকায় মনসার থানে বছর পঁয়ত্রিশের আশাপূর্ণা ভুঁইয়ার বাড়ি। স্বামী পরিত্যক্তা আশাপূর্ণার সংসারে কোনও আশাই পূর্ণ হয়নি। তবুও জীবনযুদ্ধে তিনি হেরে যেতে চাননি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে, দশম শ্রেণির পড়ুয়া এক সন্তানকে মানুষ করতে নানা ধরনের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়। তাঁর শিল্পী মন ও প্রশিক্ষণ পুজোর মরশুমে আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। তিনি সূচিশিল্পে দক্ষ, ভালো উলের কাজ জানেন। আশাপূর্ণার মতো আরও ২৫ জন মহিলার সুতোর কাজেই এবার সজ্জিত হবে মহিষাদলের অন্বয় ক্লাবের পুজোমণ্ডপ। শিল্পী পবিত্র পালের ভাবনায় সেজে উঠবে পুজোমণ্ডপ। পবিত্র বলেন, ‘সুতোয় বাঁধা মাটি’ এই থিম সুতো দিয়ে বোনা হচ্ছে। তিনি নিজে ক্যানভাসে বা কাপড়ে এঁকে দিচ্ছেন ছবি। গ্রামের মেয়েরা রঙিন সুতো ও ক্রুশের কাজে তা ফুটিয়ে তুলছেন। তিন মাস ধরে চলছে কাজ। একেকজন গড়ে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করছেন। মণ্ডপ শিল্পী হিসেবে মহিষাদলের রঘুনাথ জানা ও চন্দন মাইতির সুনাম এখন জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যে। এঁদের কাছে প্রায় ৬০-৭০ জন মহিলা পুজোর কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কলেজে পড়েন, কেউ সদ্য বিবাহিতা, কেউ মাঝবয়সি। 

    রঘুনাথ নিজে একজন ভালো চিত্রশিল্পী। এবার তিনি কোচবিহারের পাটাকুড়া ক্লাবের ৭৫তম বর্ষের পুজোয় থিমের কাজ করছেন। আর রয়েছে দিনহাটা স্বাধীন সঙ্ঘের পুজোর থিম। দু’টি জায়গাতেই পুজোর থিম মহিলাদের জীবনের লড়াই নিয়ে। পাটাকুড়ার থিম ‘নারী কথা’ এবং দিনহাটার থিম ‘অর্ধ আকাশের আর্তনাদ’। মহিষাদলের তাজপুর গ্রামে শিল্পী রঘুনাথের ওয়ার্কশপে সেই থিম ফুটিয়ে তুলছেন শুভ্রা বেরা, পল্লবী বক্সিরা। তাঁরা বলেন, এ তো আমাদের প্রতিদিনের জীবনের কান্নাহাসির কথা, তাই রং তুলিতে যতটা অনুভব নিঙড়ে দেওয়া যায় তার চেষ্টা করছি। কাঠ, প্লাই, ফাইবার, খড়ের উপর কাপড় জড়িয়ে নানা পেন্টিং ফুটিয়ে তুলছেন তাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলারা। সঞ্জু জানা থিমের মণ্ডপসজ্জার কাজ করছেন শিল্পী চন্দন মাইতির ওয়ার্কশপে। তাঁর স্বামী ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। বাড়িতে ছেলেমেয়েরা বড় হওয়ার পর সময় কাটত না। ভালো আল্পনা দিতে জানতেন। তাঁকে কাজে লাগিয়েছেন চন্দন। সঞ্জু জানা, বেলা জানা, শ্যামলী করের মতো গ্রামের শতাধিক মহিলা প্রতিবছর পুজোর আগে তিন-চারমাস ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা বলেন, নিজেদের আয়ের টাকায় পুজোয় সবাইকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারি, এরচেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে। শিল্পী চন্দন মাইতি বলেন, গত বছর পুজোর সময় ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পেমেন্ট করেছি।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)