• রাত দখলের জমায়েতে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠতেই ভিড় ফাঁকা
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: কথা ছিল, সারারাত সিউড়ির রাজপথ দখল করে একসঙ্গে প্রতিবাদ জানানো হবে। সেইমতো সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাত ৯টা থেকেই বহু মানুষের ভিড় জমে যায়। আর জি কর ঘটনার নৃশংসতা নিয়ে মানুষজন সরব হতে শুরু করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে কয়েকজনের রাজনৈতিক স্লোগান উঠতেই রাত দখলের জমায়েত ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে গেল। সাড়ে ১২টা বাজার আগেই হাতে গোনা ৮, ১০ জন ছাড়া বাকি সবাই বাড়ি ফিরে গেলেন। তাই অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যেভাবে রাজনৈতিক রুটি সেঁকা হচ্ছে, সেটা ঠিক হচ্ছে না।

    সিউড়ির বেণীমাধব স্কুল মোড়ে জমায়েত করার ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেখানের রাস্তার দু’দিক পুলিস ব্যারিকেড করে নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষের ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। সেইমতো হাতে প্ল্যাকার্ড, মোমবাতি নিয়ে মানুষজন ভিড় করতে শুরু করেন। সারারাত জাগতে হবে, এই ভাবনা নিয়েই বেশিরভাগ মানুষ এসেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের সামনেও সেরকমই বলা হয়। আস্তে আস্তে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে বেণীমাধব স্কুল মোড়। এরই মাঝে কেউ কেউ স্লোগান দিতে থাকেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই।’ সেই রাজনৈতিক স্লোগানে গলা না মিলিয়ে অনেকেই জমায়েত থেকে সরে যান। কিছুক্ষণ পরই দেখা যায় ভিড় ফাঁকা হতে শুরু করেছে। চলে যাওয়ার সময় অনেকেই বলেন, ব্যস, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা শুরু হয়ে গেল! রাত যখন ঠিক সাড়ে ১২টা, তখন হাতে গোনা ৮ থেকে ১০ জন সেখানে উপস্থিত। মহিলাদের সংখ্যা কমতে কমতে গিয়ে দাঁড়ায় ৩ থেকে ৪ জনে। 

    অবশ্য কেউ কেউ ভোরের দিকে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হন। সাধারণ মানুষজন আস্তে আস্তে যে এই কর্মসূচিগুলি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন, তা সিউড়ির পর পর দু’টি বিক্ষোভ কর্মসূচি দেখে মালুম হচ্ছে। রাতদখলের কর্মসূচি থেকে বাড়ি চলে আসা সিউড়ির চাঁদনিপাড়ার সৌমেন সরকার বলেন, কয়েকজন তো মনে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে চাইছেন। সেটা ঠিক হচ্ছে না। আসল লক্ষ্য তো বিচার! তাহলে স্লোগানে এসব কথা আসছে কেন? রক্ষাকালীতলা পাড়ার শ্যামলী নন্দী বলেন, পুলিসের বিরুদ্ধে যেভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লেখা হচ্ছে, তাতে আমি সহমত নই। রাস্তায় নেমে আন্দোলনের শুরুর দিক থেকে ছিলাম। কিন্তু কোথাও যেন মনে হচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার পরিকল্পনা চলছে। সেটা ঠিক নয়। মূল দাবিগুলোই কেবল জোরালোভাবে বলা উচিত। 

    নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কলেজপাড়ার এক তরুণী বলেন, রাত দখলের দিন ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ছিলাম। কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর নামে কুৎসিৎ স্লোগান উঠল। এটা আন্দোলনের ভাষা? তাই বাড়ি চলে এসেছি। পরের বার এদের সঙ্গে আর যাব কি না তাও ভাবব। 

    জমায়েতকে ঘিরে বিরোধী দলগুলির রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা প্রসঙ্গে শাসকদলের যুক্তি, পরিষেবা বন্ধ করে কোনও আন্দোলনই দানা বাঁধবে না। বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিষেবা। আন্দোলনের নামে ভেতরে ভেতরে রাজনৈতিক অভিসন্ধি চালালে মানুষ সরে তো যাবেই! • সিউড়ির বেণীমাধব স্কুল মোড়ে রাত দখল কর্মসূচি। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)