• সিআইএসএফের মারে হত যুবক, জখম ১, তপ্ত কুলটি
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কুলটি: সেইলের কারখানায় বেধড়ক মারে এক যুবকের মৃত্যু ও একজন গুরুতর জখম হওয়ায় সিআইএসএফের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিক্ষোভের জেরে উত্তাল হল কুলটি। সোমবার ভোরে কুলটি সেইল গ্রোথ ওয়ার্কসে এই ঘটনা ঘটে। মৃতের নাম বিকি রবিদাস(২২), বাড়ি কুলটির বাবুপাড়া এলাকায়। জখম হয়েছেন ৬৫নম্বর ওয়ার্ডের হাসানপুরার মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। অভিযোগ, দু’জনকে প্রচণ্ড মারধর করার পর কারখানার বাইরে ফেলে দিয়ে যায় সিআইএসএফ। পুলিস দু’জনকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক বিকিকে মৃত ঘোষণা করেন। তারপরই কারখানার মূল গেট বন্ধ করে ধর্নায় বসে মৃতের পরিবার ও আত্মীয়রা। তাঁদের ধর্নায় যোগ দেন বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার। সিআইএসএফ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। মূল গেট অবরুদ্ধ করে তীব্র আন্দোলন শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসও। সিআইএসএফের সঙ্গে তাদের তুমুল ধস্তাধস্তি হয়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকও ধর্নায় বসে পড়েন। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ও সেখানে ছিলেন। দু’পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে মাইক নিয়ে স্লোগান দিতে থাকলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশাল পুলিস বাহিনী ও র‌্যাফ মোতায়েন করা হয়। 

    আন্দোলনের জেরে এদিন কোনও শ্রমিক ও আধিকারিক কারখানায় ঢুকতে পারেননি। সারাদিনের মতো কারখানা স্তব্ধ হয়ে যায়। বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় আলোচনার পরও সমাধানসূত্র মেলেনি। কারখানার গেট আটকে বসে থাকে তৃণমূল, বিজেপি দু’পক্ষই। কারখানার সিজিএম শুভাশিস সেনগুপ্তকে কল করা হলে ‘মিটিংয়ে আছি’ বলে কেটে দেন। জখম মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী গোলাপ শা খাতুন বলেন, ভোরে স্বামীর ফোন থেকে আমাকে কল করা হয়। এক সিআইএসএফ কর্মী আমাকে গালিগালাজ করে স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ফোনে স্বামীর আর্তনাদ শুনতে পাই। তারপরই জানতে পারি কারখানার গেটের বাইরে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আমার স্বামী পড়ে রয়েছে। সিআইএসএফ স্বামীকে পিটিয়ে খুন করতে চেয়েছিল। মৃত বিকি রবিদাসের বাবা শঙ্করবাবু বলেন, ছেলে চেন্নাইয়ে কাজ করছিল। বেগুনিয়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে সিআইএসএফ কারখানায় ঢুকিয়ে ছেলেকে পিটিয়ে মেরে দিয়েছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেইলের এই কারখানায় চোরের উপদ্রব রয়েছে। রবিবার গভীর রাতেও চোরের দল ঢুকেছিল। তারপরই এই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ঘটনার পরই কারখানার মূল গেটের সামনে সকাল ৭টা থেকে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারখানায় চুরির উদ্দেশ্যে ঢুকলে তাদের আটক করে পুলিসের হাতে তুলে না দিয়ে কেন এভাবে মারধর করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। সকাল ১০টা নাগাদ বিজেপি বিধায়ক ধর্নায় বসে পড়তেই আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগে। তিনি অভিযোগ তোলেন, যেসব সিআইএসএফ জওয়ানের মারে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দিতে হবে। তাঁরা কারখানার গেটের সামনে ত্রিপল টাঙিয়ে বসে গেট অবরুদ্ধ করে দেন। কিছু ঠিকাদার কারখানায় আটকে থাকা শ্রমিকদের বের করার চেষ্টা করলে কারখানার গেট আটকে দাঁড়িয়ে পড়েন মৃতের মা আলেয়াদেবী সহ কয়েকজন। পরে তৃণমূল তুমুল বিক্ষোভ দেখায়। মেয়র পারিষদ সদস্যা ইন্দ্রাণী মিশ্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেন। তৃণমূলের অভিযোগ, সিআইএসএফকে দিয়ে এক দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে খুন করল ওরা।
  • Link to this news (বর্তমান)