• পুজোয় কি স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি? প্রশ্ন জলবন্দি ভূতনির বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, মালদহ ও মানিকচক: জল নেমে গিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু মানিকচকের ভূতনির প্রায় দেড় লক্ষাধিক বাসিন্দার মধ্যে রেখে গিয়েছে অনেক কিছু হারানোর ক্ষত। দুর্গাপুজোর আর বাকি ঠিক একমাস। কিন্তু পুজোর আগে ঠিক কতটা স্বাভাবিক হবে তাঁদের জীবন এবং চারপাশ তা নিয়ে ধন্দে ভূতনিবাসী। পুজো অবশ্য হবে। কিন্তু তাতে উচ্ছ্বাস হয়তো থাকবে না, জানাচ্ছেন ভূতনির বানভাসি এলাকার বাসিন্দারা। সবমিলিয়ে ১২টি সর্বজনীন দুর্গাপুজো হয় ভূতনির তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে। পাশাপাশি কয়েকটি বাড়ির পুজোও হয়। কিন্তু বানভাসি ভূতনির বাসিন্দাদের অধিকাংশেরই এবার সামর্থ্য নেই পুজোর চাঁদা দেওয়ার। তাই সর্বজনীন দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন তাঁদের ভরসা রাজ্য সরকারের অনুদান। 

    দক্ষিণ চণ্ডীপুরের নাসা সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সভাপতি বিনয় মণ্ডল বলেন, যেভাবে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাতে আমরা দুর্গাপুজোর আয়োজন নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলাম। এমনকী আমরা ভেবেছিলাম জল না কমলে ভূতনি চণ্ডীপুর হাইস্কুলের ছাদে মায়ের পুজো অর্চনা করব। তবে দক্ষিণ চণ্ডীপুরে বাঁধ কেটে দেওয়ার পর জল এলাকায় প্রায় নেই বললেই চলে। এখনও মন্দির চত্বরে জল থাকলেও আমরা আশাবাদী, প্রতিবছরের মতো এবছরও মায়ের আরাধনা করতে পারব আমরা। তিনি বলেন, চারপাশের যা অবস্থা তাতে অনেকেই চাঁদা দিতে পারবেন না। তাই রাজ্য সরকারের অনুদানের ৮৫ হাজার টাকার ভরসাতেই যথাসাধ্য পুজো করব। 

    উত্তর চণ্ডীপুরের দুর্গারামটোলা সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক মনোরঞ্জন চৌধুরী বলেন, দুর্গাপুজোর আগে যেভাবে এলাকা থেকে জল নেমেছে আমরা তাতে খুশি। ইতিমধ্যে পুজোকে কেন্দ্র করে আমাদের একটি বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিমা তৈরি এবং প্যান্ডেলের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি আমরা। 

    মানিকচক ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তর চণ্ডীপুরের তৃণমূল নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ভূতনির বন্যা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট জেগে উঠেছে। ইতিমধ্যে পঞ্চায়েতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে প্রতিটি দুর্গাপুজোর মণ্ডপকে ফের ঠিক করতে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকী সংস্কার করা হবে রাস্তা। আশা করা যায় সামনের দুর্গাপুজো উভয় সম্প্রদায় যৌথভাবে পালন করব। 

    তবে এই পুজোয় তাঁরা কতটা শামিল হতে পারবেন তা নিয়ে ভাবনায় ভূতনির অনেক বাসিন্দাই। উত্তর চণ্ডীপুরের বধূ মালা মণ্ডল বলেন, জল নেমেছে। কিন্তু চারপাশে অনেকেই রোগভোগে আক্রান্ত। অনেকের আর্থিক অবস্থাও করুণ। নতুন জামাকাপড় কেনার মানসিকতা বা সামর্থ্য- কোনওটাই নেই। এবারের বন্যা পরিস্থিতি বড্ড ক্ষতি করে দিয়ে গিয়েছে।

    ভূতনির আরেক বাসিন্দা নরেন চৌধুরী বলেন, নিজেদের কথা ভাবছি না। কিন্তু পরিবারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আছে। ওরা পুজোতে নতুন জামাকাপড় না পেলে আনন্দ করবে কী করে? অথচ আমাদের ভরসা কৃষিকাজ থেকে রোজগার। হাতে যেটুকু অর্থ রয়েছে তা দিয়েই নিজেদের না হোক অন্তত বাচ্চাদের একটা করে জামাকাপড় কিনে দেব। • নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)