• মানুষ সরে যাচ্ছে, কীসের আন্দোলন? গরিবরা কোথায় যাবে, ফাটল প্রতিবাদীদের মধ্যেই
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দিকে দিকে আন্দোলনের আগুন। বর্তমানে অবশ্য তাকে স্ফুলিঙ্গ না বলে হিমশীতল বাতাসের স্পর্শ বলা চলে। শনি-রবিবার হলেই স্রোত বাড়ে ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলনের। আর কালঘাম ছোটে সাধারণ মানুষের। বাড়ি ফিরতে গিয়ে আচমকা রাস্তাজুড়ে আঁকার কর্মসূচি। ‘মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কি আন্দোলনের নামে ফ্যাশন প্যারেড?’—বাসে ঘাম মুছতে মুছতে এমনই মন্তব্য উড়ে আসে ক্লান্ত অফিসযাত্রীদের কণ্ঠে। প্যারেড শেষে ‘ছবিগুলো পাঠিয়ে দিস’-এর মতো নির্মল বার্তা ছুড়ে দেন তথাকথিত আন্দোলনকারীরা। এহেন আন্দোলনকারীদের মধ্যেই এখন প্রশ্ন জাগছে, ‘মানুষ তো সরে যাচ্ছে!’ কেউ বলা শুরু করেছেন, ‘কোন্নগরের যে ছেলেটা মারা গেল, আমরা কি তা চেয়েছিলাম?’ আবার ‘উত্সব’ বয়কটের আবহেও উঠছে বিরুদ্ধমত। বলছেন, ‘বেলুনওয়ালা-ফুচকাওয়ালা-ঢাকিওয়ালাদের কথা ভাবব না?’

    ফাটল চওড়া হচ্ছে আন্দোলনে। হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুক গ্রুপে সারাক্ষণ চলছে আন্দোলনের আলোচনা। মতের আদান প্রদান। কিন্তু আন্দোলনে রাজনীতির রং এবং মানবিকতার বিসর্জন ভাবিয়ে তুলছে রাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের। বিরোধিতায় দাঁড়ানো সাধারণ মানুষ সাফ বলছেন, ‘আবার লাল-গেরুয়া বলে দাগিয়ে দেবেন না প্লিজ!’ আন্দোলনে না নামলে কি একঘরে হয়ে যাচ্ছেন? ঢোঁক গিলে কেউ বলছেন, ‘ঠিক তা নয়! যা হয়েছে সেটা তো একেবারেই অন্যায়। কিন্তু অরাজনৈতিক আন্দোলন কেমন যেন দামি ব্র্যান্ডের লোগো কিংবা নামী ডিজাইনারের হাতে তৈরি পোশাক দেখানোর খেলা।’ আবার কারওর কাছে ‘আমার পার্টি এখনও রাস্তায় আছে’ কিংবা ‘আমি এখনও রাস্তায় আছি’ বার্তা দেওয়া। তা বলে কেউই কি ঘটনার গভীরতা বুঝে রাস্তায় নামেননি? এমনটা অবশ্যই নয়। কিন্তু প্রান্তিক শ্রেণির মানুষরা কোথায়? সেকথা মনে করাতেই মাস খানেক বাদে গৃহসহায়িকা, রিকশচালকদের সংগঠিত করে পথে নামানো হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সেই শ্রেণির মানুষদেরই বক্তব্য, ‘ওঁরা তো সব সকালে উঠে অফিসে যাচ্ছে। আর আমাদের? সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে বাড়ি ফিরতেই ঘামে ভিজতে হচ্ছে।’ তারই মধ্যে আর জি করের মাটি ভিজেছে কোন্নগরের মায়ের কান্নার জলে। ২৭ বছরের যুবকের মৃত্যুতে পরিবারের লোক ‘চিকিত্সায় গাফিলতি’র অভিযোগ তুলেছেন। চিকিত্সকরা সেই দাবি নস্যাত্ করলেও পুত্রহারা মায়ের কান্না থামছে না। রাজনীতির ছ্যাঁকা গায়ে না লাগা আন্দোলনকারীরা কেঁপে গিয়েছেন এই কান্নায়। অনেকেই বলা শুরু করেছেন, ‘এই ঘটনা তো আমাদের সঙ্গেও ঘটতে পারে। তখন কী হবে?’ ফলবশত তাঁদের কাউকে হয় ট্রোল হতে হচ্ছে, কাউকে শুনতে হচ্ছে ডাক্তারদের যুক্তি। অগত্যা দুরুদুরু বুকে খানিক আশঙ্কা নিয়েই চুপ করে যাচ্ছেন বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীরা। এক ব্যক্তি বলছিলেন, ‘আমাদের আন্দোলন কোনও মায়ের চোখের কান্না দেখার জন্য নয়।’

    পাথরপ্রতিমা, মুর্শিদাবাদ থেকে শহরের সরকারি হাসপাতালে আসা কৃষক পরিবারের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত চোখের জল ফেলে রোগী নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। তাঁদের বক্তব্য, শহরের বাবুরা কি আমাদের খবর রাখেন? হয়তো কেউ রাখেন। তাই বিরুদ্ধতার পথে ভিড় জমতে শুরু করেছে। ফাটল কিন্তু বাড়ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)