বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষ এক নয়, অনেকেই বোধহয় গুলিয়ে ফেলেছেন, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলাদেশের শেখ হাসিনা উৎখাত পর্ব থেকে উৎসাহিত কিছু মানুষ যে এপারেই ‘ঢাকা’র পুনরাবৃত্তি চাইছে, এমনটা উপলব্ধি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উপলব্ধি থেকেই সোমবার তাঁর পরামর্শ—‘বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ দেখে সুযোগটা নিচ্ছেন তো! কিন্তু বাংলাদেশ আলাদা দেশ, ভারত আলাদা রাষ্ট্র। আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, সম্মান করি। আপনারা বোধহয়, এই দুটো মাথায় রাখতে ভুলে গিয়েছেন!’ প্রসঙ্গত, হাসিনা উৎখাত পর্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান ঢাকার গণভবনে চড়াও হয়েছিল সাধারণ মানুষ। আর জি কর কাণ্ডকে সামনে রেখে এপারেও রাতারাতি গজিয়ে ওঠে ‘পদ্ম’পাতা’র আড়ালে বাংলাদেশি মডেলের ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। বারমুড়া-স্যান্ডো গেঞ্জি, লুঙ্গি, শাড়ি পরিহিতা প্রবীণা, লালবস্ত্র পরিধেয় স্বঘোষিত সাধুসন্তবেশী ছাত্রদের নিয়ে সেই অভিযান হিংসাত্মকও হয়ে উঠেছিল। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিসকে আক্রমণ সবই হয় গত ২৭ আগস্ট। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের মর্মান্তিক ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ে হাতে। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরু করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেরকম একটা পর্যায়ে মমতার পদত্যাগের দাবিতে হয়েছিল ওই আন্দোলন।
আর জি কর কাণ্ড নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি বাংলাদেশের মতোই ‘ধরো-মারো’ পথেই বিচার চাইছেন। সংবিধান, সুপ্রিম কোর্ট, গণতন্ত্রের প্রতি ভরসা যে নেই, তাও বোঝাচ্ছেন তাঁদের অনেকে। জমায়েতে যেমন ইরাক-তুর্কির কুর্দিশস্তানের বিপ্লবীদের স্লোগান—‘জিন, জিয়ান, জিন্দেগি’ লেখা হচ্ছে রাজপথে, তেমনই আবার হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি কর্মী নাজনীন আখতার মৌসুমি চৌধুরির গাওয়া—‘দেশটা তোদের বাপের নাকি........’, শোনা যাচ্ছে গভীর রাতের কলকাতায়। তাতে গলা মেলাতে দেখা যাচ্ছে, লালপার্টির নেতা-কর্মী বলে পরিচিত পরিবারের লোকজনকেও, যাদের দল সিপিএমের সঙ্গে ‘যুদ্ধ করে দেশ পেয়েছি’ বা ভারতের স্বাধীনতার কোনও সম্পর্ক কোনওদিনই ছিল না। ন্যায়বিচারের দাবি, তরুণী চিকিৎসকের মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিবাদ থেকে সরে এসে এখন ’বাংলাদেশ সিনড্রোমে’ আক্রান্ত প্রতিবাদীদের একটা অংশ।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা পছন্দ হয়নি কিছু ‘ফেবু বিপ্লবী’র। সমাজমাধ্যমে তাদের কারও পরামর্শ—‘যে কোনওভাবে এখানে চাই বাংলাদেশের পুনরাবৃত্তি। এভাবে হবে না, হাসিনার মতোই টেনে হিঁচড়ে নামাতে হবে নবান্নের গদি থেকে। আবার কেউ বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট নয়, জনতার আদালতই সর্বোচ্চ বিচারক! বিচার হোক গণআদালতে! এহেন চর্চার মাঝেই মমতার তির্যক মন্তব্য—‘এখানে বাংলাদেশ হবে না। বাংলাদেশেই বাংলাদেশ হয়। এখানে নয়।’
এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও সাংসদ পার্থ ভৌমিক জানান, সিবিআই তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর ২৭ দিন পার করে ফেলেছে। অথচ এখনও ঘটনার কিনারা করতে পারেনি।