• কলকাতা কি বাটির মতো? জানতে টোপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ পুরসভার
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা শহরের ভূপৃষ্ঠের গঠন কেমন? বাটির মতো। নাকি প্লেট আকৃতির? এমন নানা আলোচনা মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। তবে বাটির মতো আকৃতি হওয়ার কারণেই নাকি শহরের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হলেই জল জমে। এই ধারণা রয়েছে অনেকের। শহরে জল জমা নিয়ে বিবিধ ব্যাখ্যা শোনা যায়। সেগুলি কি বিজ্ঞানভিত্তিক? কলকাতা পুরসভার দাবি, এমন কোনও নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য হাতে নেই। এমন কোনও সমীক্ষাও কোনওদিন হয়নি। এবার বরং হবে।

    কলকাতা শহরের ভূপ্রকৃতিগত বৈশিষ্ট জানতে টোপোগ্রাফিক্যাল (ভূসংস্থান) ম্যাপ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমীক্ষাটি হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। তার নাম ‘লাইডার সার্ভে’। এই কাজের জন্য শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে। কলকাতার ভূপৃষ্ঠ কোথায় উঁচু, কোথায় নিচু, কোথায় ঢালু বা কোন এলাকার ঢাল কোন দিকে গড়িয়েছে সে তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে থাকবে ডিজিটাল ম্যাপে। 

    পুরসভার নিকাশি বিভাগ সূত্রে খবর, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়নে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তিন ধাপে সেই টাকা পাওয়া যাবে। তার মধ্যে ৫০ কোটি টাকা খরচ করে ‘আর্লি ফ্লাড ওয়ার্নিং সিস্টেম’ অর্থাৎ কোন অঞ্চলে কত বৃষ্টি হলে কত জল জমতে পারে, তার আন্দাজ পেতে বিশেষ ডিজিটাল সেট আপ তৈরি করা হবে। তার অঙ্গ হিসেবেই এই টোপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ তৈরির জন্য লাইডার সার্ভের সিদ্ধান্ত। পুরসভার নিকাশি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ তারক সিং বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের নিকাশির উন্নতিতে একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তারই অঙ্গ হিসেবে নয়া ফুলপ্রুফ সিস্টেম তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।’ 

    পুরসভার এক আধিকারিক বলেছেন, আমাদের কাছে শহরের কোনও টোপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ নেই। ফলে কোন অঞ্চল নিচু বা কোথায় ভূপৃষ্ট উঁচু, তার পরিমাপ কত, কোথায় ভূপৃষ্ঠের ঢাল কোনদিকে রয়েছে, পুরোটি বোঝার জন্য এই লাইডার সার্ভের মাধ্যমে ম্যাপ তৈরি করা হবে। এই ধরনের সমীক্ষার ক্ষেত্রে সাত সেন্টিমিটার রেডিয়াসের (ব্যাসার্ধ) ব্যবধানে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের ছবি তোলা হয়। কিন্তু আমরা নয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রত্যেক পাঁচ সেন্টিমিটার রেডিয়াসের ব্যবধানে ছবি তুলব। তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ হবে। ড্রোনের মাধ্যমে হবে এই সমীক্ষা। যাতে প্রত্যেকটি অঞ্চলের ভৌগোলিক গঠন সম্পর্কে প্রায় ১০০ শতাংশ নির্ভুল তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। তার উপর ভিত্তি করে ‘আর্লি ফ্লাড ওয়ার্নিং সিস্টেম’ তৈরি হবে। 

    পুরসভার বক্তব্য, কলকাতায় নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে অল্প বৃষ্টিতেই জমা জলের সমস্যা তৈরি হয়। উত্তর কলকাতায় ঠনঠনিয়া, মহাত্মা গান্ধী রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, কলুটোলা বা দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন কসবা, মুকুন্দপুর, যাদবপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক, ঢাকুরিয়ার মতো এলাকায় জল জমার জেরে ভুগতে হয় স্থানীয়দের। টোপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ তৈরি হলে ওই সমস্ত অঞ্চলে অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি জল জমার প্রকৃত কারণ বুঝতেও সুবিধা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)